একসময় লোডশেডিং হলেই পাড়ায় আর্তনাদ শোনা যেত, ওই জ্যোতি চলে গেল। জ্যোতি বসুর নাম টেনে এ রসিকতার উদ্ভাবন কে করেছিলেন, কে জানে! কিন্তু জ্যোতি বসু নিজে কী করতেন লোডশেডিং হলে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সময় আর রাজনীতির চক্করে বাঙালি অনেক কিছুই হারিয়েছে, অনেক কিছুই ভুলেছে। কিন্তু একটি জিনিস নেই নেই করেও রয়ে গিয়েছে তার মধ্যে, তা হল রসবোধ। আর সেই রসবোধেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে রসিকতা করতেও পারে সে। তাও এমন একজন প্রশাসনিক প্রধান, যাঁর মুখে হাসি বিরল ছিল বলেই শোনা যায়। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে জ্যোতি বসুকে নিয়ে। নামমাহাত্ম্যেই বিদ্যুতের সঙ্গে জ্যোতি বসুর সম্পর্ক টেনেছিল বাঙালি। একসময় পাড়ায় পাড়ায় লোডশেডিং হলেই শোনা যেত, কেউ না কেউ ঠিক চেঁচিয়ে উঠেছেন, যাহ, জ্যোতি চলে গেল! কিংবা, জ্যোতিবাবু চলে গেলেন। আচ্ছা, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের এলাকায় কি লোডশেডিং হত? সেসময় কী-ই বা করতেন তিনি? সে গল্পই শুনিয়েছিলেন তাঁর পড়শি নবনীতা দেবসেন।
আরও শুনুন:
হকার উচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম কলকাতায়, অথচ পুরনো শহরেও হাজির ছিলেন ফেরিওয়ালারা
‘জ্যোতিবাবুর পড়শি’ নামে এক লেখায় নবনীতা বলেছিলেন,
“হ্যাঁ, আমরা জ্যোতিবাবুর পাড়ায় থাকি। সত্যি বলতে কী আমরা ওঁদের বাড়ির খুব কাছাকাছিই থাকি, একদম সামনের বাড়িতেই। না, না, আমাদের লোডশেডিং হয়। কে বলল হয় না? জ্যোতিবাবু সে-রকম লোকই নন যে, নিজের পাড়ার জন্যে আলাদা ব্যবস্থা করবেন। এ পাড়ায় ছাই কোনো হাসপাতাল-টাসপাতালও নেই যে, লাইনটা টেনে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। নাঃ, মুখ্যমন্ত্রীর জন্যে কোনো আলাদা ব্যবস্থা করেনি সি.ই.এস.সি.।”
সত্যি বলতে, যে সময়ে রাজনীতির সঙ্গে দুর্নীতি শব্দটি ক্রমাগত জুড়ে যাচ্ছে, সে সময়ে এমন কথা শুনলে আশ্চর্যই লাগে বইকি। প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কোনও বাড়তি সুবিধে অবশ্য নিতেই পারতেন জ্যোতি বসু, কিন্তু তেমনটাও করেননি তিনি। এমনকি লোডশেডিং-এর মোকাবিলা করার জন্য সে পাড়াতেও যখন অনেকের ঘরেই ইনভার্টার এসে গিয়েছে, তখনও লোডশেডিং-এর সময় তাঁর ঘর আলো-বাতাসহীন। নবনীতাই বলছেন,
“জ্যোতিবাবু বেচারির অবশ্য ইনভার্টার দেখিনি। উনি সন্ধ্যাবেলায় রোজই দেখতুম আপিস থেকে ফিরে দক্ষিণের বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে তালপাতার পাখা নেড়ে নেড়ে হাওয়া খান। মা বলেন, কী করবে? আমাদের ঘরে আলো জ্বললে লোকে বলবে ‘ইনভার্টার’। ওর ঘরে আলো জ্বললেই যে বলবে ‘লোডশেডিং হয় না’। বড়ো মেয়ে বললে, ‘উনি তো বুদ্ধি করে আলো না জ্বেলে, কেবল পাখাগুলো চালালে পারেন। লোকে জানতেই পারবে না তিনতলার ঘরে পাখা চলল কি না।’ কিন্তু সুবুদ্ধিটা বোধহয় সে মুখ্যমন্ত্রীকে দেয়নি।”
আরও শুনুন:
বাঙালির ভোজে পোলাও না থাকলেই নয়! কিন্তু তার জন্ম কি আদৌ ভারতে?
গভর্নর হাউসে চলে যাবার আগে অবধি ওঁদের এ-রকমই ব্যবস্থা চলছিল, বলে জানিয়েছেন নবনীতা দেবসেন। আর তাঁর সেই স্মৃতিচারণেই ধরা পড়েছিল রাশভারী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর অচেনা ছবিটি।