বিজয়া দশমী। মেয়েকে বিদায় জানাবার দিন। কিন্তু যে মেয়ে, সে-ই তো মা। হৃদিকমলে তার চির আসন পাতা। তাই দশমী তিথিতে দুঃখের মাঝে নিবিড় হয়ে থাকে আনন্দ। দেবীকে নিজের অন্তরে লীন করে নেওয়ার অনুভবে যে আনন্দ মেলে। তাহলে বিসর্জন হলেও আনন্দ উৎসবের সূচনা এই দিন। আর বাঙালির আনন্দ উৎসবে মিষ্টি থাকবে না, তা কি হয়?
মিষ্টিমুখের নানা গল্প শোনালেন সৌরাংশু।
বিজয়ার প্রথাগত মিষ্টিগুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাঙালির একটুকরো খাদ্য ইতিহাস। ছানার মিষ্টির পথিকৃৎ যে বাঙালি, তার খাওয়াদাওয়ার ইতিহাসে কিন্তু আদতে ছানার কোনও ঠাঁই ছিল না। আর সেটাই বোঝা যায় ওই ‘নারকেল ছাবা’, কাঠগজা, নিমকি ইত্যাদি বিজয়ার চিরচেনা মিষ্টিগুলির মধ্যে দিয়ে।
আরও শুনুন: সেকালে চল ছিল আমিষের, এখন অষ্টমীর ভোগে মাকে কী কী দেওয়া হয়?
আজকাল তো কেউ আর বাড়িতে মিষ্টি তৈরি করে না। কিন্তু বছর কুড়ি আগেও নবমী নিশি পোহালে, দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলার আগে পরে বাঙালির ঘরে ঘরে বারকোশ, বড় লোহার কড়াই, ছাঞ্চা বা লোহার খুন্তি বেরিয়ে পড়ত।
নারকেল ছাবা বা নারকেল ছাপা সন্দেশের জন্য রসালো নারকেল কুড়িয়ে নিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হত। তারপর লোহার কড়াইতে ঢিমে আঁচে সেই বাটা নারকেল দিয়ে নাড়তে নাড়তে সামান্য এলাচ মিশ্রিত দুধ দিয়ে তাতে একটু একটু করে চিনি মেশানো হত। খেয়াল রাখতে হত যে দুধ বা চিনি বা আঁচ, কোনওটারই পরিমাণ একবারে যেন বেশি না হয়ে যায়। তাহলে আর নারকেল ছাপার সাদা রঙটা থাকবে না। পাক দেবার সময়ই হাতে করে যদি দেখা যায় যে স্বচ্ছন্দে গুলি তৈরি করা যাচ্ছে, জল জল ভাব নেই বা খুব শক্ত নয়, তখন পাথর বা কাঠের ছাঁচে ঘি লাগিয়ে হাতে ঘি দিয়ে একটু একটু পাক দেওয়া নারকেল বসিয়ে ছাপ তুলে সন্দেশ তৈরি হত।
আরও শুনুন: নবমীতে মায়ের প্রসাদ ‘নিরামিষ মাংস’, কীভাবে রাঁধা হয় এই বিশেষ পদ?
এর পরের খাবারটি হল মিষ্টি নিমকি বা কাঠগজা। আকারে পার্থক্য থাকলেও পদ্ধতিতে সামান্যই ফারাক। ময়দা সামান্য নুন, বেকিং সোডা এবং ঘি দিয়ে মেখে নিতে হবে। ৫০০ গ্রাম ময়দায়, অর্ধেক চা-চামচ সোডা, এক চিমটে নুন এবং তিন টেবিলচামচ ঘি ময়ান দিয়ে একটু একটু করে জল দিয়ে শুকনো করে মাখতে হবে। তারপর আধঘণ্টা বিশ্রাম।
বাকি অংশ শুনে নিন।