এককালে নাকি বৃষ্টি হলে আনন্দে মেতে উঠতেন কলকাতার মানুষ। কেন? কারণ, বৃষ্টি নামলেই কলকাতায় আসর বসত এক বিশেষ ধরনের খেলার। কী সেই খেলা? বৃষ্টির উপর বাজি ধরে জুয়া খেলত কলকাতা শহর। আসুন, পুরনো দিনের ধুলো ঝেড়ে শুনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
সপ্তাহের শুরুতেই দিনভর বৃষ্টিতে জলবন্দি কলকাতা। কিন্তু ছোটবেলার সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিয়েছে রেনি ডে-ও। সুতরাং বৃষ্টি মাথায় করেই হোক, আর জলে সাঁতরেই হোক, বাইরে বেরোতে হচ্ছে অনেককেই। যানবাহন অপ্রতুল। ফলে বাড়তি ভাড়া গুনতে গিয়ে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা। অনেকেই মনে মনে গজগজ করছেন, ‘কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষ মাস’। কিন্তু জানেন কি, বরাবরই বৃষ্টির দিনে এমন পৌষ মাস তথা সৌভাগ্যের সাক্ষী এই কলকাতা শহর? কেমন করে? শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
আরও শুনুন: প্রথম বাঙালি কোটিপতি, ব্যবসা করে সেই আমলে তাক লাগিয়েছিলেন রামদুলাল দে
তবে হ্যাঁ, এ গল্প শুনতে গেলে আপনাকে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় শ’দুয়েক বছর। পা রাখতে হবে উনিশ শতকের কলকাতায়। আর তবেই আপনার কানে এসে পৌঁছবে বর্ষা-বাজির হুল্লোড়।
আরও শুনুন: রাজার শখ… আর কিছু নয় একেবারে জোড়া বাঘ পুষেছিলেন কৃষ্ণনগরের মহারাজা
বর্ষা-বাজি, কারণ বাজি ধরা হত খোদ বর্ষার উপরেই। উনিশ শতকে বড়বাজার অঞ্চলের জনপ্রিয় জুয়া ছিল এই খেলা। বৃষ্টির উপর বাজি ধরে জুয়া খেলা হত সেদিনের কলকাতা শহরে। বৃষ্টি পড়তে শুরু করল তো ব্যস, কোনও একটা বড়সড় পুরনো বাড়ি বেছে নিত জুয়াড়িরা। তারপর ঘাঁটি গাড়ত জল বেরোবার নর্দমার ধারে। অপেক্ষা, কখন বৃষ্টি নামে মুষলধারায়। আর তার সুবাদে নর্দমা দিয়ে জল বেরিয়ে আসে কি না হুড়হুড়িয়ে। পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে প্রবল তোড়ে জল বেরবে কি না, এর উপরেই চড়ত বাজির দর। আনা থেকে টাকা। দু আনা থেকে পাঁচশ টাকা। জুয়াড়িদের হাতে টাকা উড়ে যেত খোলামকুচির মতো। ফলে বুঝতেই পারছেন, বৃষ্টি যদি না গড়ায়, তো চোখের জলই বেরিয়ে আসবে প্রবল বেগে। আর কপালক্রমে একবার যদি বৃষ্টি হয়, হর্ষধ্বনি শোনা যেত প্রায় দু কি.মি দূর থেকেও। সেকালে এক খবরের কাগজের প্রতিবেদনে কী লেখা হয়েছিল জানেন? ‘বৃষ্টি পড়িলে খোট্টা মাড়ওয়ারীরা এমনই চিৎকার করিয়া ওঠে যে, গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত হইবার সম্ভাবনা।’ বোঝাই যাচ্ছে, কেমন জমত এই খেলা! আজকের মতো বৃষ্টি নামলে হা-হুতাশ নয়, বরং বৃষ্টির দেখা না পেলেই কপাল চাপড়াতেন সেকালের কলকাতার অনেক মানুষ।
ঋণ: ‘কলির শহর কলকাতা’, হরিপদ ভৌমিক