খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন নামের লটারির বিজ্ঞাপন। কোনোটায় পুরস্কার ৫ লাখ টাকা, কোনোটায় ১০ লাখ, কোনোটায় হয়তো বা ফ্রিজ-টিভির মতো কোনও শখের জিনিস। কিন্তু লটারির পুরস্কারে দুর্গাপুজো? এমনটি শুনেছেন কখনও?
প্রথমদিকে দুর্গাপুজো মানেই ছিল ধনী লোকেদের বাড়ির নিজস্ব পুজো। নিমন্ত্রণ না পেলে সে পুজো দেখার সুযোগ ঘটত না সাধারণ মানুষের। সাহেবসুবো কিংবা বড়লোক বাবুদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে পুজো দেখবে সাধারণ লোকজন? তাও কি হয়?
কিন্তু বেশিদিন এই নিয়ম চলল না। দূর থেকে পুজোর ঢাকের আওয়াজ শুনে, কিংবা কোনও এক ফাঁকে মা দুর্গার মুখ দেখে আর সন্তুষ্ট থাকতে চাইলেন না সাধারণ বাঙালি গৃহস্থরা। ঠিক করলেন, তাঁরাই আবাহন করবেন দেবীকে। কিন্তু চারদিনের পুজোর ব্যয়ভার বহন করা তো মুখের কথা নয়। সুতরাং সবার ভাঁড়ার থেকে কিছু কিছু করে নিয়ে গড়ে উঠল পুজোর তহবিল।
এদিকে আরেকটা ঘটনাও ঘটছিল। ধুমধাড়াক্কা বাবুয়ানির চোটে আস্তে আস্তে টান পড়ছিল তহবিলে। আবার ইংরেজ শাসনও ততদিনে একটা সংহত রূপ পেয়েছে। নেটিভ প্রজাদের সঙ্গে এত গা ঘেঁষাঘেঁষি বড়কর্তারা খুব একটা ভাল চোখে দেখছিলেন না। ফলে সাহেবদের পৃষ্ঠপোষকতাও কমে এল। সঙ্গে সঙ্গে কমল ধনী বাড়ির পুজোর জাঁকজমক। কদর বাড়ল বারোয়ারি পুজোর।
এই বারোয়ারি পুজোর খরচ ওঠানোর জন্য চাঁদা চাওয়া শুরু হয়েছিল, সে তো আমরা জানিই। কিন্তু আরও সরেস এক উপায় বের করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। ধুরন্ধর সেই মানুষটি পুজোর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন লটারির খেলা। কীভাবে? সে কথাই বলছি।
১৮২২ সালের ঘটনা। সেবার পুজোর আগে দেখা গেল এক বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটি লটারির। টিকিটের দাম এক টাকা। মোট আড়াইশো টিকিট। অভিনব ব্যাপার হল, এই লটারির উদ্দেশ্য দুর্গাপূজা। আর পুরস্কার? যে জিতবে, তার নামে সংকল্প হবে ওই দুর্গাপূজার। শিবপুরে হয়েছিল এই পুজো। সংবাদপত্রেও বেরিয়েছিল এই খবর। শিরোনাম ছিল ‘সূর্ত্তির দুর্গোৎসব’। ‘সূর্ত্তি’ অর্থে লটারি।
লটারির খেলা আজও চলে রমরমিয়ে। তবে খোদ দেবী দুর্গার পূজার জন্য লটারির আয়োজন, এমন নজির সম্ভবত সেই প্রথম আর সেই শেষ। আর এমন কাজ করাও একমাত্র হুজুগে বাঙালির পক্ষেই সম্ভব।