নকল হইতে সাবধান! এ কথা তো আমাদের অনেকেরই জানা। জাল বা নকল জিনিস রুখতে বেশ কড়া নিয়মকানুনও আছে। তা সত্ত্বেও নকল জিনিস যে একেবারেই বিক্রি হয় না, তা তো নয়! ঘটনা হল, চোখের সামনে সেই নকল জিনিস দেখে কী প্রতিক্রিয়া হয় স্রষ্টার? ধরা যাক, একজন লেখক দেখলেন রাস্তায় তাঁরই লেখা ‘নকল’ বই বিক্রি হচ্ছে। তাতে কি তিনি খুশি হবেন না দুঃখিত হবেন? আসুন, এরকমই অভিজ্ঞতা হয়েছে, এরকম দুজন লেখকের এ বিষয়ে কী অভিমত, তা শুনে নিই।
দুনিয়া যতই বদলে যাক, বই পড়তে আজও ভালবাসেন বহু মানুষ। এই স্মার্টফোনের যুগেও তাই দেখা যায় রাস্তার ধারে ধারে আছে বহু বইয়ের দোকান। এমনকী ট্রাফিক সিগন্যালে সিগন্যালে আজও বই হাতে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন কেউ কেউ। পথচলতি মানুষ, পছন্দ হলে তা কিনে নেন। হ্যাঁ, অনলাইনে কেনাকাটাই যে যুগে দস্তুর, সেখানে এখনও এইভাবে বই বিক্রি হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বই বিক্রি হয়? সব কি আসল বই? আমরা প্রায় সকলেই জানি, এইভাবে যে বই বিক্রি হয়, তা সেই অর্থে আসল বই নয়।
আরও শুনুন: গাধার নাম অ্যালফাবেট, বইয়ের বোঝা পিঠে যারা পৌঁছে যায় প্রান্তিক এলাকায়
একজন লেখক তাঁর মেধা, মনন ও শ্রম দিয়ে সৃষ্টি করেন সাহিত্য। তা যখন বই হয়ে ওঠে, তখন তার সঙ্গে জড়িয়ে যায় প্রকাশনা শিল্প। আরও বহু মানুষের শ্রম এবং বিনিয়োগ হাত ধরাধরি করেই একটা বইয়ের জন্ম হয়। সেই বই বাণিজ্যসফল হলে সামগ্রিক প্রকাশনা শিল্পেরই উন্নতি হয়। কিন্তু এই সিস্টেম এড়িয়ে যখন বই বিক্রি হয়, তখন আখেরে তাতে ক্ষতি প্রকাশকদেরই। এখন এইরকম পরিস্থিতিতে মহা মুশকিলে পড়েন লেখকরা। সেই লেখক, যিনি দেখছেন তাঁর চোখের সামনেই তাঁর বই বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু তা আসল নয়, নকল। অর্থাৎ পাইরেসি হচ্ছে। কোনও লেখকই মনেপ্রাণে পাইরেসি সমর্থন করেন না। তাহলে এক্ষেত্রে লেখকদের অভিজ্ঞতা ঠিক কীরকম?
দেশ ও বিদেশের দুই বিখ্যাত লেখকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের সূত্রে আমরা সেই বিষয়টি অনুমান করতে পারি।
আরও শুনুন: বটতলার বই থেকে আধুনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন… নারীশরীর কি বরাবরই ‘জনপ্রিয় পণ্য’!
প্রথমজন, চেতন ভগত। আইআইটি, আইআইএম-এর এই উজ্জ্বল ছাত্র লেখালিখিকে ভালবেসে নিজের পেশা ছেড়ে এসেছিলেন। লেখাকেই বেছে নিয়েছিলেন জীবিকা হিসেবে। বই জাল করা অর্থাৎ পাইরেসি যে তাঁর বিলকুল না-পসন্দ, সে কথা বুঝিয়ে দিতে কসুর করেননি এই লেখক। বলেছেন, এর ফলে তাঁর প্রত্যক্ষ ক্ষতি হয়। কিন্তু এহেন চেতন ভগতও তাঁর মত পরিবর্তন করেন তাঁর একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পর। ট্রাফিক সিগনালে অনেক খুচরো বিক্রেতা বই বিক্রি করেন। সেরকমই একজন একদিন এগিয়ে এসেছিলেন সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা লেখকের গাড়ির কাছে। বিক্রির জন্য তিনি যে বইগুলো দেখিয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল চেতন ভগতের নতুন বইও। বিক্রেতা এ কথাও সগর্বে জানিয়েছিলেন, এই লেখকের বইয়ের বিক্রি বেশ ভাল। তাঁকে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর চেতন ভগতের মনে হয়েছিল, তিনি পাইরেসিকে সমর্থন না করলেও তা এমন অনেক মানুষকেই জীবিকার জোগান দিয়েছে। তবে জাল বইয়ের বদলে এই বিক্রেতাদের মূল বই বিক্রি করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রায় একইরকম অভিজ্ঞতা আরেকজন জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক লেখকেরও। তবে তিনি কিন্তু মনে করেন, এই বিক্রেতাদের সৎ পথে উপার্জন করার হদিশ দিয়েছে এই পাইরেট কপিগুলি। সেই কারণেই এতে আপত্তি করা তো দূর, নিজেকে তিনি সম্মানিত মনে করেন বলে জানিয়েছেন বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো।
এই দুই অভিজ্ঞতাই জানান দেয়, খানিকটা নিরুপায় হয়েই যেন এরকম একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তাঁদের। পাঠক যদি আসল বই কেনেন, তবে প্রকাশকেরও স্বস্তি আর লেখকের তো বটেই।