গুরুর সান্নিধ্য না পেলে যেমন প্রকৃত জ্ঞান হয় না, তেমনই গুরুর দেখা না পেলে প্রকৃত শিষ্যও হয়তো নিজের কথা বলে উঠতে পারেন না। যে কথা তাঁর বলা উচিত, তা আর কাকে বলবেন? এরকমই এক গল্প আমরা পাই আদি শঙ্কর আর তাঁর শিষ্য হস্তামলকাচার্যের আখ্যানে।
সনাতন ধর্মবোধ আমাদের জানায়, গুরুর কৃপা না হলে ঈশ্বরলাভ হয় না। ভারতীয় সংস্কৃতি গুরুমুখী। ঈশ্বরজ্ঞান হোক বা অন্য যে কোনও শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করতে হলে গুরুর শরণ নিতেই হয়। এককালে গুরুভবনে থেকে বিদ্যার্থীরা পাঠাভ্যাস করতেন। শিখে নিতেন জীবনের গূঢ় শিক্ষা। গভীর তত্ত্ব গুরুই তো বুঝিয়ে দিতে পারেন। পুথি যা পারে না, তপস্যা যা দিতে পারে না, গুরুর কৃপা লহমায় সেই অলৌকিক ঐশ্বর্য এনে দিতে পারে শিষ্যের সামনে। গুরু শিষ্যের চোখে পরিয়ে দেন জ্ঞান রূপ অঞ্জন।
আরও শুনুন: গঙ্গাস্নানে পুণ্য হয়, কেন এই বিশ্বাস অটুট ভক্তদের?
শিষ্য তাই যেমন থাকেন গুরুর খোঁজে। গুরুও সন্ধান করেন একজন প্রকৃত শিষ্য। আদি শঙ্কর আর হস্তমলকাচার্যের গল্প থেকে আমরা এই আশ্চর্য শিক্ষাটি পেতে পারি। আদিগুরু শঙ্কর তখন অবস্থান করছেন শ্রীবলী অঞ্চলে। তাঁর মতো একজন জ্ঞানী সাধকের উপস্থিতিতে সেই অঞ্চলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। বহুজন উপস্থিত হয়েছেন আদিগুরুর দর্শন পেতে। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন এক দুঃখী ব্রাহ্মণ আচার্য। তাঁর নাম প্রভাকর। নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য তাঁর মনে ভারি ক্লেশ। কেননা তাঁর সন্তান কথা বলে না। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন যে সন্তান মূক। উপনয়নের পরও সে শাস্ত্রপাঠ করে না। বলতে গেলে কিছুই করে না। জড়বুদ্ধির মতো বসে থাকে। আচার্য প্রভাকর শুনেছিলেন আদিগুরু শঙ্করের যোগবিভূতির কথা। তাই কিছু সুরাহা হওয়ার আশায় তিনি ছেলেকে এনেছেন গুরুর কাছে।
আরও শুনুন: গীতার অমূল্য জ্ঞানরাশি অর্জুনের আগে আর কাকে কাকে বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ?
শঙ্কর সেই ছেলেকে দেখে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে? তুমি কোথা থেকে এসেছ? শঙ্কর তাঁকে প্রশ্ন করতে থাকলেন- তুমি এখান থেকে কোথায় চলে যাবে? এই জগতে তোমার কী নিয়ে আকাঙ্ক্ষা? আচার্য প্রভাকর বুঝেই উঠতে পারছিলেন না, যে ছেলের মুখে কথা সরে না, তাঁকে আদিগুরু শঙ্কর এত প্রশ্ন করছেন কেন? সে তো উত্তর দিতে পারবে না। কিন্তু তাঁকে বিস্মিত করে জীবনে প্রথমবার কথা বলে উঠল সেই ছেলে। শুধু কথাই বলল না, অনর্গল স্তোত্র বলে যেতে থাকল সে। তার চোখমুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল অলৌকিক বিভায়। যখন তাড় স্তোত্র আবৃত্তি শেষ হল, তখন আদিগুরু বললেন, এই ছেলে সাধারণ সন্তান তো নয়। এর মুখ থেকে এই মুহূর্তে যা শোনা গেল, তা সকলেরই আবৃত্তি করা উচিত। কেননা এই কথা জানা থাকলেই আত্মজ্ঞান করতলে আমলকির মতো ধরা দেবে। এই সমূহ স্লোকের নাম হল হস্তামলক স্তোত্র।
বাকি অংশ শুনে নিন।