তাঁর পবিত্র স্পর্শে মুছে যায় সমস্ত কলুষ। তিনি পতিতোদ্ধারিণী। পুণ্যদায়িনী দেবী গঙ্গা। আমাদের সনাতন ধর্মাচরণের সংস্কৃতিতে দেবী গঙ্গা আছেন বিশেষ স্থানে। পুজো-আচ্চায় গঙ্গাজল আজও লাগে। মনে করা হয়, গঙ্গাজলই সমস্ত অপবিত্রকে পবিত্র করে তুলতে পারে। এই যে বিশ্বাস, তার কারণ জানতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে পৌরাণিক আখ্যানে। আসুন, শুনে নিই।
যে কোনও শুভ কাজ আরম্ভে একটু গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেওয়াই আমাদের রীতি। আমাদের বিশ্বাস তাতে সমস্ত কিছু শুদ্ধ হয়ে পূজার্চনার উপযোগী হয়ে ওঠে। গঙ্গাজলে শুদ্ধতার প্রতি এই বিশ্বাসের কারণেই ভক্তেরা গঙ্গাস্নান করেন। মনে করা হয়, বহু পুজোপাঠ, মন্ত্রোচ্চারণে যে ফল লাভ করা যায়, সেই একই ফল লাভ করা যায় গঙ্গাস্নানেই।
আরও শুনুন: গীতার অমূল্য জ্ঞানরাশি অর্জুনের আগে আর কাকে কাকে বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ?
এই যে বিশ্বাস তার গোড়াটা কোথায়? পৌরাণিক কাহিনির ভিতরেই আছে এর উত্তর। ঋগ্বেদে আছে গঙ্গার উল্লেখ। স্কন্দপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও আমরা দেবী গঙ্গাকে দেখতে পাই। আর মহাভারতে দেবী গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের যে অনুষঙ্গ আমরা পাই, তা রাজা সগরের কাহিনি। ষাট হাজার সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। একবার তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু ইন্দ্র সেই অশ্ব চুরি করে নেন। তখন রাজা সগর তাঁর সন্তানদের অশ্বের খোঁজে পাঠান। ষাট হাজার সন্তান তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকেন অশ্বটিকে।
আরও শুনুন: পুজোর সময় কেন আরতি করা হয়? কী এর তাৎপর্য?
একদিন তাঁরা দেখতে পান মহর্ষি কপিলের আশ্রমে অশ্বটি রয়েছে। কপিল তখন ধ্যানমগ্ন। এদিকে অশ্বটিকে যে তাঁদের দরকার। সেই সঙ্গে মনে সন্দেহ জাগছে, কপিল মুনিই কি অশ্বটিকে চুরি করে এনে এখানে রেখেছেন। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই তাঁরা মুনির ধ্যান ভঙ্গ করলেন। আচমকা ধ্যানভঙ্গ হওয়ায় ভয়ানক ক্রুদ্ধ হলেন কপিল মুনি। আর তৎক্ষণাৎ অভিশাপ দিয়ে সগর রাজার সন্তানদের ভস্ম করে দিলেন। পারলৌকিক ক্রিয়া না হওয়ায় তাঁরা প্রেত হয়ে আবদ্ধ থেকে গেলেন। সগর রাজার উত্তরপুরুষ ভগীরথ যখন এ কথা জানতে পারলেন, তখন ভারি কষ্ট পেলেন তিনি। কী করে পূর্বপুরুষের মুক্তি হয়, এই ভাবনা ভাবনা ভাবতে ভাবতে তিনি জানতে পারলেন দেবী গঙ্গাকে যদি মর্ত্যে আনা যায়, তবে তিনি যা চাইছেন তা সম্ভব। ভগীরথ তখন ব্রহ্মার স্তব শুরু করলেন। তাঁর স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা জানান, দেবী গঙ্গাকে মর্ত্যে প্রবাহিত হবেন।
আরও শুনুন: স্বর্গের সিংহাসন পেয়েও কেন পতন হয়েছিল রাজা নহুষের?
কিন্তু হেন প্রস্তাবে ভারী অসম্মানিত বোধ করলেন স্বয়ং গঙ্গা। তিনি ঠিক করলেন, গোটা মর্ত্যকে তাঁর স্রোতে প্লাবিত করবেন। গঙ্গার এই ক্রোধহেতু প্রলয় আসন্ন হয়ে উঠল। ভগীরথ তখন শরণ নিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের। ভগীরথের বন্দনায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তখন গঙ্গাকে ধারণ করলেন নিজের জটায়। আর তারপর সেই ধারাকে প্রবাহিত করলেন মর্ত্যে।
বাকি অংশ শুনে নিন।