শরীরে বড়সড় কোনও গোলমাল বাধলে আমাদের টনক নড়ে। কিন্তু তার আগে শরীর যে বিভিন্ন ইশারা ইঙ্গিত পাঠাতে থাকে, সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিই না। অথচ সামান্য সচেতন হলেই কিন্তু এড়ানো যায় বড় কোনও বিপত্তি। জানেন কি, এই সতর্ক হওয়ার পথে শরীরের কোন অঙ্গটি বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে আমাদের?
ব্যোমকেশের রহস্যভেদের ভক্ত যাঁরা, তাঁরা জানেন কীভাবে ‘মাকড়সার রস’ উপন্যাসে এক অসুস্থ বৃদ্ধ কীভাবে নেশা করছেন, তা ধরা গিয়েছিল তাঁর জিভের রং দেখেই। বস্তুত, জিভ বস্তুটি মোটেও ফেলনা নয়। কিন্তু খাওয়ার সময় ছাড়া জিভের কথা আর খেয়াল পড়ে কখন! কিন্তু জানেন কি, শরীরের অনেক সমস্যারই আঁচ আগেভাগে পাওয়া যেতে পারে, যদি জিভের অবস্থার দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখা যায়। এমনকি, কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তারও হদিশ পাওয়া যেতে পারে এখান থেকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এমনই কিছু লক্ষণের কথা।
আরও শুনুন: গলা ব্যথা, দুর্বলতা… আর কী কী লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ওমিক্রন আক্রান্তদের?
জিভে অনেকসময়ই সাদা ছোপ পড়ে। এই আস্তরণকে পরিষ্কারও করা যায় না। এই অবস্থাকে বলা হয় লিউকোপ্লাকিয়া। যদি এমন কিছু দেখেন, তাহলে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া চলে না।
আবার কখনও কখনও সাদার বদলে জিভের উপরে কালো ছোপ দেখা যায়, বা জিভের রং কালচে হয়ে আসে। এমনটা প্রায়শই ঘটে থাকে। কিন্তু এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয়। অ্যান্টাসিড নিলে তা লালারসের সঙ্গে মিশে এমন রংবদল ঘটাতে পারে।
কিন্তু যদি জিভের রং অস্বাভাবিক উজ্জ্বল লাল দেখায়, তাহলে চিন্তার কারণ রয়েছে। বিরল রোগ কাওয়াসাকি ডিজিজ, যা শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়, তার লক্ষণ হতে পারে উজ্জ্বল লাল জিভ। আবার স্কারলেট ফিভারের লক্ষণও হতে পারে এই লাল রং। আর জিভ যদি লাল রঙের এবং মসৃণ হয়, তার সঙ্গে মুখে ব্যথা থাকে, তাহলে আপনার শরীরে বি-থ্রি ভিটামিনের ঘাটতি থাকার সমূহ সম্ভাবনা।
আরও শুনুন: একা একাই দিন কাটে আপনার সন্তানের! তাকে ভাল রাখবেন কী করে?
এ তো গেল রংবদলের কথা। কিন্তু জিভে রোম গজানো? হ্যাঁ, হতে পারে এমনটাও। এগুলি আসলে প্রোটিন থেকে তৈরি হওয়া বাড়তি সুতোর মতো অংশ, যেখানে খাবারের অংশ এবং ব্যাকটেরিয়া আটকে যেতে পারে। তবে এগুলি নিজেই পরিষ্কার করে ফেলা সম্ভব। তবে জিভে যদি সামান্য ফোলা ফোলা অংশ চোখে পড়ে, তা কিন্তু একরকম আলসার ‘ক্যাঙ্কার সোরস’-এর লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত জিভে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হলেও। কারণ তা স্নায়ুরোগের কারণে যেমন হতে পারে, আবার অ্যাসিড রিফ্লাক্স কিংবা ডায়াবেটিসের কারণেও হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় সবচেয়ে চেনা লক্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যাওয়া এবং কোনও স্বাদ না পাওয়া। এখানেও, অধিকাংশ সময় জিভই ধরিয়ে দিয়েছিল আসল অপরাধীকে। সুতরাং, অবহেলা না করে এরপর থেকে নজর দিন আপনার শরীরের এই উপকারী বন্ধুটির দিকে।