কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়াই ছিল নেশা। যেখানেই প্রজাপতি দেখতেন, দাঁড়িয়ে পড়তেন। ক্যামেরায় বন্দি করে নিতেন রংবেরঙের আশ্চর্য ওই পতঙ্গটিকে। পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজনের কাছে খানিক হাসির খোরাকও ছিল তাঁর এই অভ্যাস। তবে গায়ে মাখতেন না সোনম। এমনি করতে করতেই একদিন খুঁজে পেয়ে গেলেন এমন একটি প্রজাপতিকে, যার খবর এতদিন জানত না কেউই।
কত মানুষের কত রকম নেশা। কেউ ভালবাসেন বই পড়তে, তো কেউ সিনেমা দেখতে। কেউ বা ক্যামেরা কাঁধে বেরিয়ে পড়েন পাখির খোঁজে, কেউ খুঁজে বেড়ান গাছপালা। তবে উত্তর সিকিমের জোংগুর বাসিন্দা সোনমের নেশা ছিল প্রজাপতি ধরার। তবে শিশি বা কৌটোতে নয়, ক্যামেরায়।
আরও শুনুন: জমিতে কাজের সময় হারিয়েছিল বিয়ের আংটি, ৫০ বছর পর তা খুঁজে পেয়ে অবাক বৃদ্ধা
সোনম ওয়াংচুক লেপচা। বরাবরই ছবি তুলতে ভালবাসতেন সোনম। বিশেষত প্রজাপতি দেখলেই হাত নিশপিশ করে উঠত তাঁর। পাড়া-প্রতিবেশী-আত্মীয়-বন্ধুরা দেখে মজা করতেন। তবে তাতে ভারী বয়েই যেত সোনমের। নতুন নতুন প্রজাপতি খুঁজে বেড়ানোই যে তাঁর নেশা। ২০১৬ থেকেই এই নেশা মাথা চাড়া দিয়েছিল। নতুন ধরনের প্রজাপতি দেখলেই তার ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতেন এনটোমোলজিস্টদের কাছে। ভাবছেন তাঁরা আবার কারা? আসলে নানা ধরনের কীটপতঙ্গ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদেরই পোশাকি নাম এনটোমোলজিস্ট। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার অব বায়োলজিকাল সায়েন্সের তৈরি বাটারফ্লাই অব ইন্ডিয়া নামে একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হত সোনমের সেসব ছবি।
২০২০ সালে সেখানে সোনালি হলুদ রঙের উপরে খয়েরি ছোপ ছোপ একটি প্রজাপতির ছবি পাঠান সোনম। আর সেখান থেকেই বদলে গেল সোনমের জীবন।
আরও শুনুন: মহাকাশে ফলল লংকা, অসাধ্য সাধন করলেন বিজ্ঞানীরা
ভারতে কী কী ধরনের প্রজাপতি পাওয়া যায়, সেসব নিয়ে গবেষণা করেন ড. ক্রুষণামেঘ কুন্তে নামে এক গবেষক। তিনি ও তাঁর দল সোনমের তৈরি ছবিটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানান, এমন প্রজাপতি আগে ভারতে দেখা যায়নি। হতেও পারে এটা কোনও নতুন প্রজাতি। এর পরেই এনসিবিএসের তরফে সোনমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিকিমের বন দফতরের থেকেও নেওয়া হয় অনুমতি। আর তার পরেই ওই প্রজাতিটির খোঁজ শুরু করেন ড. কুন্তের দলবল।
তাঁদের খোঁজাখুঁজির ফলে মিলেও যায় সেই নতুন প্রজাতির প্রজাপতি। তাকে চিহ্নিত করা থেকে বৈজ্ঞানিক নামকরণ পর্যন্ত, হয়ে গিয়েছে সবটাই। বৈজ্ঞানিক নামেও রাখা হয়েছে সোনমের বাসভূমি জোংগুর উল্লেখ। ড. কুন্তে জানান, হংকং ও দক্ষিণ-পূর্ব চিনের কাছে হুনান প্রদেশ, এই দু-জায়গায় ওই প্রজাপতিটির আত্মীয়স্বজন রয়েছে। তবে ভারতে এমন প্রজাপতির খোঁজ মিলল এই প্রথম।
জোংগুতে বরাবরই প্রচুর প্রজাপতির দেখা মেলে। জোংগুর কাছে ব্লাইকোভু বলে একটি জায়গা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনম। যার অর্থ হল প্রজাপতির দেশ। তা এই প্রজাপতির দেশে থাকলে যে প্রজাপতির নেশা চেপে বসবেই, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে। আর সেই নেশাই তাঁকে এনে দিল অন্যরকম আবিষ্কারের সম্মান।