নিজের হাতে ফলানো ফসলের যেন স্বাদই আলাদা। বাড়িতে একটুকরো জমিতে, কিংবা ব্যালকনি বা ছাদে, এমনকি জানলায় ঝোলানো টবে যখন ছোটখাটো কোনও ফল বা সবজি জন্মায়, বাগানিদের মনে আনন্দ দেখে কে! এমনটাই ঘটেছে একদল মহাকাশচারীর সঙ্গে। পৃথিবীতে নয়, খোদ মহাকাশেই ফসল ফলিয়ে বসেছেন তাঁরা! কীভাবে এমন অসাধ্য সাধন করলেন তাঁরা?
মহাশূন্যেই নাকি ফলছে লংকা! শুনলে মনে হবে যেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কল্পবিজ্ঞান সিরিজের কোনও গল্প। যেখানে মঙ্গলে থাকা মানুষজন বুধ গ্রহে গিয়ে টাটকা সবজি বাজার করে ফেরেন। কিন্তু এ তো গল্পও নয়, কল্পনাও নয়। সত্যিই যে এমন অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন একদল মহাকাশচারী। মহাকাশের শূন্যোদ্যানেই লংকার চাষ করেছেন তাঁরা। আর ফসলও ফলেছে দিব্যি!
আরও শুনুন: কোন মাটি কোন ফসলের জন্য ভালো? জানতে নয়া পদ্ধতি আবিষ্কার নবম শ্রেণির ছাত্রীর
ব্যাপারটা খুলেই বলা যাক। মহাকাশ অভিযানে যাঁরা যান, তাঁদের এমনিতেও প্রায় সব কাজের কাজি বলা চলে। মহাকাশে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা ও শুশ্রূষা করা থেকে প্রয়োজনে মহাকাশযান সারাই করা, সবকিছুই তাঁদের কমবেশি জেনে রাখা ছাড়া উপায় নেই। কারণ এই ধরনের কোনও ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল অভিযানে ওই বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী মানুষদেরই নির্বাচন করা হয়, বিভিন্ন পেশার একাধিক মানুষকে পাঠানো চলে না। ফলে একা হাতে ওই অভিযাত্রীরা বিভিন্ন কাজই সামলে থাকেন। তবে চাষ করা ব্যাপারটা তাঁদের কাছেও নতুন। সেই কাজটাই সম্ভব করে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের নভশ্চরেরা। পৃথিবীর বাইরে শূন্য অভিকর্ষে একবার নয়, দু-দুবার লংকা ফলিয়ে তাঁরা প্রমাণ করে ফেলেছেন, পৃথিবীর বাইরেও কৃষিকাজ করা সম্ভব হতে পারে। এটিই কোনও স্পেস স্টেশনে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘতম এক্সপেরিমেন্ট।
আরও শুনুন: নিজের জন্মের জন্য খোদ চিকিৎসককে কাঠগড়ায় তুলে আদালতে তরুণী
চলতি বছরের জুন মাসে ৪৮টি স্যানিটাইজড লংকাবীজ স্পেস স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। আর ১২ জুলাই মহাকাশ ল্যাবরেটরিতে বিশেষভাবে প্রস্তুত চাষের জমিতে ওই বীজ রাখা হয়। পুরো ক্ষেত্রটির আয়তন ছিল বড়োজোর একটি বড়সড় মাইক্রোওয়েভ আভেনের মতো। চারটি গাছে অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার পর সেগুলি বাদ দিয়ে বাকিগুলি ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ফ্যানের সাহায্যে এবং হাত দিয়ে পরাগমিলন ঘটানো হয়। অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ প্রথমবার গাছগুলি থেকে ফসল তোলা হয়। দ্বিতীয়বারে ১২টি লংকা পৃথিবীতে নমুনা হিসাবে পাঠানো হয়। মোট ২৬টি লংকার বাকিগুলি মহাকাশচারীদের একঘেয়ে খাবারে খানিক পরিবর্তন এনেছিল, বলাই বাহুল্য। প্রথম সাফল্যের পর ফের কী কী ফসলের চাষ করা যেতে পারে, তা নিয়েই এখন ভাবনাচিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা।