পুরাণে আছে রাজা নহুষের কাহিনি। মহাভারতেও আমরা তাঁর উল্লেখ পাই। যোগ্য ব্যক্তি হিসাবেই একসময় স্বর্গের শাসনভার পেয়েছিলেন তিনি। আবার কৃতকর্মের জন্য সেখান থেকে তাঁর পতনও হয়। আর এই গল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যা আমাদের জীবনকেও আলো দেখায়। আসুন শুনে নিই রাজা নহুষের উপাখ্যান।
সেবার ইন্দ্র বধ করেছেন ত্রিশিরাকে। ত্রিশিরা মানে যাঁর তিনটি মাথা। এই ত্রিশিরা ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। ইন্দ্রের অস্ত্রের আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হলেন ঠিকই, কিন্তু ইন্দ্র নিশ্চিত হতে পারলেন না আদৌ ত্রিশিরার মৃত্যু হয়েছে কিনা। তখন এক ইন্দ্র এক ছুতারকে অনেক করে অনুনয় করলেন। যেন তিনি তাঁর কুঠার দিয়ে ত্রিশিরার মুণ্ডচ্ছেদ করেন। প্রথমে নিমরাজি হলেও ছুতার শেষমেশ ইন্দ্রের কথায় ত্রিশিরার মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিল। এদিকে ত্রিশিরার মৃত্যু হয়েছে শুনে ভয়ানক ক্রুদ্ধ হলেন তাঁর বাবা ত্বষ্টা। এমনিতেই ইন্দ্রের সঙ্গে তাঁর পূর্বশত্রুতা ছিল। ইন্দ্রই যে ত্রিশিরাকে বধ করেছে তা জানতে তাঁর বাকি থাকল না। তখন তিনি তাঁর ঐশী ক্ষমতাবলে তৈরি করলেন এক দৈত্যকে। তার নাম বৃত্র।
আরও শুনুন: কেন নৃসিংহ অবতার ধারণ করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু?
তার উপর দায়িত্ব পড়ল ইন্দ্রকে সংহার করার। যেমন কথা তেমন কাজ। শুরু হয়ে গেল স্বর্গে বৃত্রের তাণ্ডব। একসময় তো দৈত্য ইন্দ্রকে গিলেও ফেলল। অনেক কষ্টে দেবতারা বিশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করে ইন্দ্রকে বের করলেন, আর ইন্দ্র স্বর্গ থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেন। এই বৃত্র দৈত্যকেও অবশ্য শেষমেশ খানিকটা কৌশলেই বধ করেন ইন্দ্র। তাও দেবতাদের সঙ্গে সন্ধিস্থাপনের পর। ইন্দ্র বুঝতেই পারছিলেন যে, এর ফলে তাঁর নিজেরও পাপ হয়েছে। ত্রিশিরাকে বধ আর তারপর বৃত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা- এর দরুন যে পাপ হয়েছে, সেই ভয়ে ইন্দ্র নিজেকে জলের ভিতর লুকিয়ে ফেললেন।
আরও শুনুন: ‘বিদ্রোহী ভৃগু’ কেন ভগবানের বুকে এঁকে দিয়েছিলেন পদচিহ্ন?
স্বর্গ তখন হয়ে পড়ল রাজাহীন। নানা বিপর্যয় এল নেমে। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারে না! একজন সর্বগুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে স্বর্গের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হল। তিনি-ই হলেন রাজা নহুষ। নিজের যোগ্যতাবলে স্বর্গের সিংহাসন অধিকার করলেন তিনি। এইখান থেকেই শুরু হল কাহিনির নতুন মোড়। স্বর্গের রাজা হয়ে নহুষের মাথা গেল ঘুরে। অহংকার পেয়ে বসল তাঁকে। উদ্ধত হলেন তিনি। একদিন তিনি চাইলেন, স্বর্গের রানি শচী দেবী যেন পদসেবা করেন। এ প্রস্তাব শুনে শচী দেবী যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন। গোপনে তিনি ইন্দ্রের সঙ্গে দেখা করেন আর তারপর এক কৌশল করেন। শচী দেবী নহুষকে জানান, যদি তাঁকে একটা উপযুক্ত পালকি করে নহুষ নিয়ে যেতে পারেন, তবে তিনি পদসেবায় রাজি। কেমন পালকি? না, যে পালকির বাহকরা হবেন তপস্বী মুনীরা।
বাকি অংশ শুনে নিন।