কথায় বলে, “কৃষ্ণপ্রেমে সবাই পাগল, রাধাই কেবল কলঙ্কিনী”। কৃষ্ণপ্রেমে আকুল হয়ে ভক্তেরা যে কী করতে পারেন, তার কোনও সীমা নেই। সম্প্রতি সামনে এল তেমন এক ভক্তের কথাই, যিনি অস্ট্রেলিয়াতে গড়ে তুলেছেন এক টুকরো বৃন্দাবন। তাঁর কথা জানালেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রকৃত ভালবাসার জন্য মানুষ নাকি সব ছাড়তে পারে বলে শোনা যায়। বোধহয় তেমনই এক ভালবাসা খুঁজে পেয়েছিলেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ার এই মহিলা। কোনও মানুষের মধ্যে নয়, ঈশ্বরের মধ্যে সেই অপার্থিব প্রেমের সন্ধান পেয়েছিলেন তিনি, যা তাঁকে আকুল করে তুলেছিল। প্রেমিক কৃষ্ণ তাঁকে কী দিয়েছিলেন তা তিনিই জানেন, তবে তাঁর জন্য নিজের সবকিছু দিতে তিনি দুবার ভাবেননি। নিজের দেশ ছেড়ে, পরিচিত জগৎ ছেড়ে, এমনকি পেশা পর্যন্ত ছেড়ে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন ভিন দেশে। পৃথিবীর একেবারে উলটো পিঠে। এসে পৌঁছেছিলেন এই ভারতে। এদেশেই দীর্ঘ তেরোটি বছর কাটিয়েছেন তিনি। কৃষ্ণ উপাসনার পীঠস্থান বৃন্দাবনে। এমনকি ফের বিদেশে ফিরেছেন যখন, তখন সেখানেও জিইয়ে রেখেছেন কৃষ্ণ ভগবানের সাধনাভূমি। আর সে কথাই রবিবার নিজের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আরও শুনুন: মাটির নীচে ঘুমিয়ে ৪৫০০ বছরের প্রাচীন সূর্যমন্দির, অবশেষে মিলল খোঁজ
প্রত্যেক মাসে সম্প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর এই রেডিও অনুষ্ঠানের ৮৩তম পর্ব ছিল এদিন। সেখানেই কৃষ্ণভক্ত জগত্তারিণী দাসীর কথা জানিয়েছেন মোদি। কৃষ্ণভক্তি প্রচারের উদ্দেশ্যে অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী, তথা শ্রীল প্রভুপাদ যে ইস্কন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেখানেই যোগ দিয়েছিলেন এই মহিলা। তখন তিনি অস্ট্রেলিয়ার পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী। কিন্তু ১৯৮৩ সালে সবকিছু ছেড়ে সপরিবারে বৃন্দাবন ধামে চলে আসেন তিনি। পরবর্তী তেরো বছর কাটিয়ে দেন সেখানেই। ভক্তিবেদান্ত গুরুকুলে তিনি পাঠ দান করতেন, আর অবসর সময়ে ওই অঞ্চলের পবিত্র স্থানগুলি দর্শন করে বেড়াতেন। এই ভ্রমণের সময়ও কোনোরকম বিলাসিতা ছিল না তাঁর, স্থানীয় পরিবহনই ব্যবহার করতেন তিনি।
আরও শুনুন: খালি পায়েই পদ্ম সম্মানের মঞ্চে, দেশবাসীকে চমকে দেওয়া এই পরিবেশবিদকে চেনেন?
১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে ফিরে গিয়ে পাকাপাকিভাবে পার্থে থাকতে শুরু করেন জগত্তারিণী দাসী ও তাঁর পরিবার। কিন্তু বৃন্দাবনকে ভুলতে পারেননি তিনি। নিজের শিল্পী সত্তাকে কাজে লাগিয়ে সেখানেই গড়ে নিয়েছেন এক টুকরো বৃন্দাবন ধাম। ছবি এঁকে, মিনিয়েচার বা বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য গড়ে তাকে রূপ দিয়েছেন তিনি। তাঁর এই প্রকল্পের নাম গোপীনাথ ধর্ম। পার্থ শহরের সোয়ান ভ্যালিতে একটি আর্ট গ্যালারি চালান জগত্তারিণী দাসী। সেই আর্ট গ্যালারিতে গেলে দর্শকেরা কেবল তাঁর আঁকা ছবিই দেখতে পান না, কৃষ্ণভক্তদের পবিত্র তীর্থ বৃন্দাবনেরও এক ঝলক দেখতে পান তাঁরা। সঙ্গে ভারতের সুপরিচিত তীর্থস্থান নবদ্বীপ বা পুরীর সংস্কৃতিরও আঁচ পান ওই দর্শকেরা। জগত্তারিণী দাসীর এমন অভিনব প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিও।