শহরের একটা প্রধান রাস্তা, অথচ সেই রাস্তা নাকি কোনওরকম পরিকল্পনা করে তৈরি হয়নি। শহরের বর্জ্যস্তূপ বুজিয়ে দেওয়ার ফলে এই রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর এককালে এই রাস্তার উপরেই নাকি বসানো হয়েছিল আস্ত একটা রেললাইনও। তাও, জঞ্জাল সাফ করার জন্যেই! শুনে নিন সেই গল্প।
বর্তমানে যে সার্কুলার রোড কলকাতার একটা বিরাট অংশকে জুড়ে রেখেছে, আদতে যে তা ছিল জঞ্জাল ফেলার জায়গা। সে কথা কি জানতেন? হ্যাঁ, আজ যে রাস্তার উপর দিনরাত গাড়িঘোড়া আর মানুষের ব্যস্ত ভিড়, এককালে তা ছিল আস্ত একটা পরিখা। অর্থাৎ খাল। বর্গি হানা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য খোঁড়া হয়েছিল এই পরিখাটি। নাম মারাঠা ডিচ। মারাঠাদের হামলা থামল, কিন্তু খাল রয়ে গেল। এদিকে নামেই শহর, কিন্তু যেখানে সেখানে নোংরা আবর্জনা জমে কলকাতার পরিবেশ তখন চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর। বিলেত থেকে এদেশে এসে পা রাখেন যে সাহেব-মেমরা, তাঁদের অনেককেই প্রাণটাও রেখে যেতে হয় এ শহরেই। ম্যালেরিয়া জ্বরে মারা যান একের পর এক সাহেব।
আরও শুনুন: প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে লিখেছিলেন আত্মজীবনী, জানেন কে তিনি?
এই পরিস্থিতিতে কলকাতার তখনকার শাসক, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিল, আর কিছু না হোক, অন্তত এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার ও বন-জঙ্গল কাটার আদেশ এল কোম্পানির তরফে। মারাঠা ডিচে জমতে লাগল শহরের আবর্জনা। ১৭৯৯ সালে মারাঠা ডিচ আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেলে আরও মাটি ফেলে পোক্ত করে তৈরি হল বাহার সড়ক বা সার্কুলার রোড।
কিন্তু সার্কুলার রোডের তাতে কপাল ফিরল না। এর সঙ্গে জঞ্জাল ফেলার ব্যাপারটা জুড়েই রইল। কেমন করে? সে কথাই বলা যাক।
আরও শুনুন: কলকাতার রসগোল্লার জন্ম এঁর হাতেই, কীভাবে এল এই সাধের মিষ্টি?
সাহেবরা বুঝতে পেরেছিলেন, একের পর এক পরিখা কেটে তাদের জঞ্জালে ভর্তি করাটা কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। ম্যালেরিয়ার মড়ক সামলাতে তৈরি হয়েছিল ফিভার হসপিটাল অ্যান্ড মিউনিসিপ্যাল এনকোয়ারি কমিটি। এই কমিটিরই উপর ভার পড়ল, শহর কীভাবে পরিষ্কার রাখা যায় তা খতিয়ে দেখার। ১৮৩৭ সালে প্রস্তাব দেওয়া হল, একটি জঞ্জাল সংগ্রহকারী গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে শহর পরিক্রমা করবে। সেই গাড়ির ঘণ্টা শুনে এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়ির জঞ্জাল গাড়িতে পৌঁছে দেবে।
বাকি অংশ শুনে নিন।