ব্যস্ত শহরের আকাশ দিনে দিনে ধুলো আর ধোঁয়া জমে কালো হয়ে ওঠে। কেবল আজ নয়, নগরের জীবনে এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল অনেক আগেই। ব্যতিক্রম ছিল না আমাদের কলকাতাও। সমস্যা এড়াতে আইন অব্দি করা হয়েছিল।
সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের রবিবারের রিপোর্ট মোতাবেক, গোটা দেশের কোনও শহরেই বায়ুর গুণমান যথাযথ নয়। ব্যতিক্রম নয় কলকাতা শহরও। এই বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ টেনেই চলতি বছর পুজোর মরশুমে বাজি পোড়ানো বন্ধ রাখার আরজি জানিয়েছিলেন এ রাজ্যের অনেক মানুষ। বিতর্ক গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। আসলে কলকাতা শহরে বায়ুদূষণ তো এমনিতেই কম হয় না। তার ফলে শ্বাসকষ্ট কিংবা ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। অথচ লকডাউন কালে কলকাতার বুকেই দেখা মিলেছিল একখানা ঝকঝকে আকাশের। বোঝা গিয়েছিল গাড়িঘোড়া, মানুষের ভিড়, কলকারখানার ধোঁয়া বায়ুকে কতখানি দূষিত করে তোলে প্রতিদিন।
আরও শুনুন: ঘোল খাইয়েছিলেন পাকিস্তানকে, সিনেমাকেও হার মানায় RAW এজেন্ট রবিন্দরের জীবন
সেই কথাটাই বুঝে ফেলেছিলেন এদেশের ইংরেজ শাসকেরাও। ততদিনে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব ঘটে গিয়েছে। এদিকে ভারত থেকে বিদায় নিয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ভারতের সিংহাসনের ভার নিয়েছেন খোদ ইংল্যান্ডসম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া। পরিকল্পনামাফিক সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সদ্য দখল করা উপনিবেশটিকে। আর রাজধানী হিসেবে কলকাতার তো আলাদাই খাতির। শাসক দেশের সূত্র ধরেই শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে প্রধান নগরগুলিতে। ১৮৫৫ সালে রেলপথ বসল কলকাতা থেকে রানিগঞ্জের কয়লাখনি পর্যন্ত। আর সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল বদল এল কলকাতার জীবনযাত্রায়। নতুন নতুন কলকারখানা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, ফলে অনেক লোকের ভিড়, সব মিলিয়ে দূষণ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ঘটতে লাগল এ শহরের। আর এই পরিস্থিতিতেই কলকাতায় চালু হল ভারতের প্রথম বায়ুদূষণবিরোধী আইন। সারা পৃথিবীর হিসেব ধরলে কলকাতাই দ্বিতীয় শহর, যেখানে এই আইন চালু করা হয়েছিল।
আরও শুনুন: ব্যায়ামের জন্য নয়, অমানুষিক শাস্তি দেওয়ার যন্ত্র হিসেবেই জন্ম হয়েছিল ট্রেডমিলের
আসলে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার ফলে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বহু গুণে বেড়ে গিয়েছিল। ধোঁয়ার দাপটে নাজেহাল হয়ে শহরের ইংরেজকুল এবং ধনী বাঙালি বাবুরা সরকারের দ্বারস্থ হলেন। আবেদনের জেরে ১৮৬৩ সালে পাশ হল নতুন আইন- ‘দ্য ক্যালকাটা অ্যান্ড হাওড়া স্মোক নুইস্যান্স অ্যাক্ট’। তাতেও অবশ্য পুরোপুরি রক্ষা হয়নি। ১৮৭৮-৭৯ সাল নাগাদ এক শীতকালে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় কলকাতার বাতাস। আজকাল কুয়াশা আর ধোঁয়া মিলে যে পরিস্থিতি মাঝে মাঝেই ঘটিয়ে থাকে, যাকে আমরা ধোঁয়াশা বা স্মগ বলে চিনি। এই অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছিল তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জনকেও। কারখানাগুলি থেকে হওয়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়োগ করা হয় একজন ইন্সপেক্টর। আর ১৯০৫ সালে জারি করা হয় এক সামগ্রিক আইন, যার নাম ‘দ্য বেঙ্গল স্মোক নুইস্যান্স অ্যাক্ট’।
তবে যে আইনই আসুক না কেন, শেষরক্ষা যে হয়নি, এখনকার পরিবেশের দিকে তাকালে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?