মন্দির। দেবতার স্থান। পবিত্র জায়গা। আর তাই সেখানে খালি পায়ে প্রবেশই বাঞ্ছনীয়। এ আসলে আমাদের দীর্ঘকালের অভ্যাস বা রীতি। এই রেওয়াজের নেপথ্যে আছে নির্দিষ্ট কিছু কারণ। আসুন শুনে নিই।
মন্দিরে সাধারণত আমরা খালি পায়েই প্রবেশ করি। মন্দির চত্বরের বাইরে কোথাও একটা জুতো খুলে রাখার নিয়ম আছে বহু জায়গাতেই। কিন্তু এ কি কেবল দীর্ঘকালের নিয়ম! আমরা জানি, আমাদের ধর্মাচরণের বিভিন্ন রীতি ও নীতি তৈরি হয়েছে নির্দিষ্ট কারণের ভিত্তিতেই। আর তাই মন্দিরে যে আমরা খালি পায়েই ঢুকি, তার নেপথ্যেও আছে বিশেষ কারণ।
আরও শুনুন: Spiritual: কীভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অতিক্রম সম্ভব? পথ দেখিয়েছিলেন কবীর
প্রথমত, এটি একরকমের শ্রদ্ধা প্রদর্শন। মন্দির অর্থাৎ যা কিনা দেবতার আলয়। যেখানে দেবতার অধিষ্ঠান বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেই স্থান বাকি সব জায়গার থেকে পবিত্র হবে, এটাই আমরা মনে করি। তাই এই পবিত্র জায়গায় জুতো না পরে যাওয়াই রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। জুতো মূলত চামড়া দিয়ে তৈরি হয়। যা পাওয়া যায় মৃত জীবজন্তু থেকে। তা ছাড়া জুতো পরে যেহেতু আমরা সর্বত্র ঘুরে বেড়াই, তাই জুতো অনেক নোংরা এবং সেই সঙ্গে জীবাণু বহন করে। যা মন্দির চত্বরে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
আরও শুনুন: সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ… কে কোন গুণের অধিকারী? চিনিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
এ ছাড়াও বলা হয় যে, আমাদের শরীরে বহু চক্র আছে, যার মধ্যে অন্যতম বা কেন্দ্রীয় হল মূলাধার চক্র। সাধারণত আমাদের খালি পায়ে চলতে বলা হয়, যাতে পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সংযোগ হয়। যা প্রকারন্তরে, এই চক্রগুলির মধ্যে সংযোগের যে বাধা, তা দূর করে। একরকম পজিটিভ এনার্জি তখন বইতে থাকে শরীরের মধ্যে। সাধারণ ভাবে শরীর ঠিক রাখার জন্য, এই কারণেই খালি পায়ে চলার পরামর্শ দেন অনেকেই। একই কথা প্রযোজ্য মন্দিরের ক্ষেত্রেও। মন্দিরে থাকে আরাধনার পরিবেশ। সর্বত্র পূজাপাঠ, মন্ত্রোচ্চারণ ইত্যাদি যে আবহ তৈরি করে তা আমাদের একটা নির্দিষ্ট মানসিক অবস্থার মধ্যে আনে। এই সময় খালি পায়ে মাটির সঙ্গে সংযোগ থাকার ফলে, অনেকে মনে করেন, ওই পজিটিভ এনার্জির স্রোত আমাদের শরীরের মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে প্রবাহিত হয়। যা আমাদের সাধারণ স্বাস্থ্য, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়ক হয়ে ওঠে। মন্দিরে যাওয়া মানে ঈশ্বরের সমীপবর্তী হওয়া। এই ধারণা আমাদের মনের মধ্যে কাজ করে। তাই সেই সময় যা কিছু পবিত্র নয় বা অস্বস্তিকর, তা আমরা ছেড়ে রেখেই ঈশ্বরের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। অনেকে তাই টাকা পয়সা ইত্যাদি সঙ্গে নিয়েও মন্দিরে প্রবেশ করেন না। কেননা ইশ্বরের সামনে সকল আমিকে পরিত্যাগ করতে হয়। তারই সূচক এইগুলি। এই পবিত্র ভাব আমাদের শরীর ও মনকে শান্ত করে। আর পৃথিবীর সঙ্গে, পঞ্চভূতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সুদৃঢ় করতে আমাদের খালি পায়ে থাকাই ভালো। কেননা জুতো একরকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাই মন্দিরে প্রবেশের সময় দীর্ঘকাল ধরেই জুতো খুলে রাখাই আমাদের রেওয়াজ।