বাংলার ঘরে ঘরে কালীপুজোর আগের রাতে চোদ্দপ্রদীপের রীতি থাকলেও দীপাবলি বা দিওয়ালি কিন্তু সর্বভারতীয় উৎসব। ‘দীপ’ এবং ‘অবলি’— এই দুই শব্দ মিলে হয়েছে সংস্কৃত দীপাবলি শব্দটি। ‘দীপ’ শব্দের অর্থ ‘আলো’ এবং অবলি শব্দের অর্থ ‘সারি। কিন্তু সারা ভারতে কেন পালিত হয় এই উৎসব?
এক দিন নয়, সারা ভারতে পাঁচ দিন ধরে পালিত হয় দিওয়ালি। একেকটি দিন একেকটি বিষয়ে জন্য নির্ধারিত। সেগুলি হল ধনতেরস, নরক চতুর্থী, অমাবস্যা, কার্তিক শুদ্ধ পদ্যমী বা বালি প্রতিপদা এবং ভাই দুঁজ। বাঙালি যাকে বলে ভাইফোঁটা। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উত্সব শেষ হয়। ধনতেরাসের দিন ধনদেবতা কুবেরের পুজো করা হয়৷ ফলে এই দিন সোনা বা কোনও ধাতু কেনা শুভ৷ মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে চতুর্দশীর দিন পালন করা হয় ছোটি দিওয়ালি৷ পুরাণ মতে এই দিন শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামার হাতে নিহত হন নরকাসুর৷ এই কারণে এই দিনটিকে নরক চতুর্দশীও বলা হয়৷
দিওয়ালি পালিত হয় অমাবস্যায়৷ বিশ্বাস করা হয় ১৪ বছর বনবাসে কাটিয়ে এই দিনে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন রামচন্দ্র৷ রামচন্দ্রের পথ আলোকিত করতেই অমাবস্য়ার রাত সেজে উঠেছিল আলোয় আলোয়৷ অযোধ্যাবাসীরা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে তুলেছিলেন রাজধানীকে। এই দিন সুখ সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী ও গণেশ পুজো করা হয়৷ পূর্বভারত বাদে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষে এই পুজোর নিয়ম প্রচলিত। জৈনদের কাছেও দীপাবলি পবিত্র দিন। জৈন মতে ৫২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এক দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন মহাবীর। শিখরাও এই উৎসবে মেতে ওঠেন। কারণ ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিনেই মুক্তি পেয়েছিলেন। অন্য দিকে আর্য সমাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে।
আরও শুনুন: ব্রহ্মদত্যি থেকে মামদো… ভূতের রাজ্যেও দিব্যি আছে সর্বধর্ম সমন্বয়
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো জনপ্রিয় হলেও বাংলার বহু বাড়িতে দীপাবলিতে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজোও হয়ে থাকে। কালীপুজো হয় তো বটেই। বাংলার কালীপুজো কিন্তু তত প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যা বিধিগ্রন্থে এই পুজোর সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর প্রজাদের কালীপুজো করতে বাধ্য করেছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে নদিয়ায় কালীপূজা জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও কালীপুজোর আয়োজন করতেন বলে জানা যায়।
আরও শুনুন: ভূতেরা নেমে আসে বলেই কি পালিত হয় ভূতচতুর্দশী?
শেষ অবধি দীপবলি হল বিশুদ্ধ আলোর উৎসব। সারা ভারতের সকলের জন্য। অমাবস্যার কালো অন্ধকার নিভিয়ে জ্বলে ওঠে আলো! হতে পারে তা প্রদীপ, মোমবাতি, কিংবা আধুনিক রঙিন এলইডি-র চকমকি।