তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বকালের সবচাইতে ধনী ব্যক্তি। তাঁর সামনে অম্বানিরা গরিব-গুর্বো মাত্র। বিল গেটস, জেফ বেজোসরাও মধ্যবিত্তের বেশি কিছু না। তাঁর ঐতিহাসিক হজ যাত্রাও ছিল সোনায় মোড়া। অথচ আফ্রিকার এক অতি গরিব দেশের রাজা ছিলেন তিনি। কে তিনি?
তিনি ছিলেন জ্বালানি তেলের কারবারি। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষের দিকে ছিলেন বিশ্বের সবচাইতে ধনী ব্যক্তি। শেখের নামটাও ছিল ‘ধনী’। মহম্মদ হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজাদ্দিন ওয়াদ্দুলাহ। সময় বদলেছে। ইন্টারনেট বিপ্লবের যুগে বিল গেটস, জেফ বেজোসরা টেক্কা দিচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীদের। এই বিল-জেফরা ব্যক্তিগত উপার্জনের নিরিখে বহু রেকর্ড ভেঙে দিয়েও তাঁকে হারাতে পারেননি। এমনকি আজ অবধি পৃথিবীর ইতিহাসের কোনও রাজাই তাঁকে ছুঁতে পারেননি। কে সেই লোক?
তিনি মানসা মুসা। আজকের আফ্রিকার অতি গরিব দেশ মালির রাজা ছিলেন তিনি। মুসা কেইটা-১ মালির সিংহাসনে বসেন ১৩১২ সালে। রাজা হওয়ার পর তাঁর নামকরণ হয় মানসা মুসা। ‘মানসা’র অর্থ সুলতান। এই মুসার সম্পদের পরিমাণ কীরকম ছিল? ইতিহাসবিদদের মতে ৪০০ বিলিয়ান ডলারের মালিক ছিলেন তিনি। কিন্তু আফ্রিকার মালির মতো অতি গরিব দেশের রাজা কীভাবে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে উঠলেন?
আরও শুনুন: প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব? জানেন এর সঠিক পদ্ধতি?
আসলে তখনকার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আলাদা ছিল। আফ্রিকা মহাদেশ তখন ফুলেফেঁপে উঠেছে। অন্য দিকে মূল্যবান সব প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা ছিল মালি সাম্রাজ্য। প্রকৃত অর্থেই সোনা ফলত মালির মাটিতে। সেই সোনাই মানসা মুসাকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে। মালিতে যে প্রচুর সোনার খনি রয়েছে তা এতদিনে সকলের জানা। মুসার জমানাতেই এর সন্ধান মেলে। শাসক হিসেবেও আগ্রাসী ছিলেন মুসা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সামাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। মালি ছাড়াও সেনেগাল, জাম্বিয়া, গিনিয়া, বুরকিনা ফাসো, নাইজেরিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। মুসার অর্থ ও প্রতিপত্তির আশ্চর্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে তাঁর হজ যাত্রা।
১৩২৪ সালে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন মুসা। ৪ হাজার মাইলের এই যাত্রা ছিল সব অর্থেই ঐতিহাসিক। অফুরন্ত ধনদৌলত সঙ্গে নিয়েছিলেন সুলতান। সঙ্গে ছিল বিরাট সেনাবাহিনী। কয়েক হাজার সেনা ছাড়াও মুসার হজ যাত্রার সঙ্গী ছিল অসংখ্য ক্রীতদাস ও প্রজা। ইতিহাসবিদদের মতে, মানসা মুসার সামনে ছিল ৫০০ সেনার একটি দল। যাঁরা শুধুমাত্র সোনা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সোনা বইতে কাজে লাগানো হয়েছিল বহু উট ও ঘোড়াকে। তাঁর এই মক্কা যাত্রার পথে বিভিন্ন জায়গায় সোনা দান করেছিলেন মুসা। যার পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল, যে মিশরের রাজধানী কায়রোতে এই কারণেই ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। ১৩৩৭ সালে মৃত্যু হয় এই মানসা মুসার।
আরও শুনুন: ফুচকার জন্ম নাকি দ্রৌপদীর হাতেই! কোথা থেকে এল এই লোভনীয় খাবার?
মানসা মুসার সম্পদের পরিমাণের হিসেবে বিল গেটস, জেফ বেজোসদের হারিয়ে দিয়েছেন বটে, তবে একটা বিষয় কিন্তু জেফদের গুণগান গাইতেই হবে। মনে রাখতে হবে, মুসা রাষ্ট্রশক্তির প্রধান হিসেবে সম্পদ অর্জন করেছিলেন। আর বিল-জেফরা ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করেছেন অর্থ। তথাপি, ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই।