কলকাতা শহরেই নাকি ভূত দেখেছিলেন ভারতের প্রথম গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস। আবার জনশ্রুতি রয়েছে, আলিপুরের হেস্টিংস হাউসে এখনও দেখা মেলে ভূতের। চার ঘোড়ায় টানা গাড়ি থেকে নাকি নেমে আসেন খোদ ওয়ারেন হেস্টিংস-ই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেইসব ভূতের গল্প।
হ্যাঁ, ভূতের দেখা পেয়েছিলেন নাকি খোদ বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস। তাও এই কলকাতা শহরের বুকে। মুখের কথা নয়, রীতিমতো পাথুরে প্রমাণ রয়েছে এই ঘটনার। কারণ সেই গোটা ঘটনার বিবরণ মহাফেজখানায় লিপিবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেদিনের বড়লাট। আর সেই সূত্র ধরেই এই ভূত দেখার গল্পকে ১৮৯৩ সালে নিজের বইয়ে ঠাঁই দেন জেমস ডগলাস।
তিনি লিখেছেন, কলকাতায় পরিষদ কক্ষের মধ্যেই নাকি ঢুকে পড়েছিল ভূত। আর সেই কক্ষে তখন হাজির ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস এবং তাঁর পারিষদবর্গও। ভূতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল কি না কেউ খেয়াল করেনি, কিন্তু তার মাথায় যে ছিল ‘স্টোভ-পাইপ হ্যাট’, অর্থাৎ চিমনির মতো দেখতে একটি টুপি, তা সকলেরই নজরে পড়েছিল। কারণ ভারতে তখনও সেই টুপির আমদানি হয়নি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নাকি বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল সেই ভূত। কিন্তু মাসখানেক পর, কলকাতায় যখন ছেয়ে গেল এই জাতীয় টুপি, তখন আবার শোনা গেল এই ঘটনার কথাও। শোনা গিয়েছিল, ওই ভূতকে নাকি সেদিন নিজের বাবা বলে শনাক্ত করেছিলেন হেস্টিংসের কাউন্সিলের সদস্য মিস্টার শেক্সপিয়র। আর যে জাহাজের ডাকে তাঁর বাবার মৃত্যুসংবাদ কলকাতায় আসে, সেই একই জাহাজে করেই নাকি এসেছিল ওই বিশেষ টুপিও।
আরও শুনুন: শুধুই খেলনা নয়, ছাপোষা মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হল তালপাতার সেপাই
মজার কথা হল, যে হেস্টিংস সাহেব নিজেই ভূত দেখেছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর ভূতকেও দেখা গিয়েছে বলে দাবি উঠেছে বারবার। তাও এই কলকাতা শহরেই। বিলেতে মারা যাওয়ার পর কীসের টানে এই নেটিভ শহরে ফিরে আসতেন ওয়ারেন হেস্টিংস? কেউ বলেন, নিজের সপক্ষের প্রমাণ খুঁজে পেতে। সেই যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইলাইজা ইম্পে-র সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মহারাজা নন্দকুমারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন, তার জন্য দেশে ফিরে তো কম খোয়ার হয়নি এককালের বড়লাটের। বিলেতে রীতিমতো বিচার হয়েছিল তাঁর। শোনা যায়, কিছু দলিল-দস্তাবেজ নাকি এ দেশেই ফেলে গিয়েছিলেন তিনি, বিচারের সময় যেগুলো হাতে পেলে তাঁর কিছু সুবিধে হত। সেই দলিল রাখা কালো কাঠের বাক্স খুঁজতেই নাকি ভারতে ফিরে আসে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূত, ফিরে আসে বড়লাটের আলিপুর হেস্টিংস হাউসে।
আরও শুনুন: মামলায় অভিযুক্ত খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষমেশ কী হল পরিণাম?
আবার কেউ কেউ বলেন, ওই কালো বাক্সেই নাকি রয়ে গিয়েছিল খান দুই মিনিয়েচার ছবি। একটি মেয়ের ছবি, যার বিশ্বাসভঙ্গ করেছিলেন হেস্টিংস। তবে কি মৃত্যুর পরেও পুরোপুরি মরে যায় না ভালবাসা, অনুশোচনা, দুঃখের মতো আবেগগুলো? সে উত্তর হয়তো দিতে পারবেন না স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূত-ও।