প্রতিদিনের বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ কী? উত্তর হল ‘হ্যালো’। কিন্তু টেলিফোনের সঙ্গে ‘হ্যালো’ শব্দটা জুড়ে গেল কী করে? এই বিষয়ে রয়েছে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাও। অনেকে মনে করেন টেলিফোনের আবিষ্কর্তা গ্রাহাম বেলের প্রেমিকার নাম ছিল হ্যালো। একথা কি সত্যি? নাকি আসল কাহিনি অন্য? আসুন শুনে নিই।
‘হ্যালো’। ফোন ধরলেই এই শব্দ উচ্চারণ করা মাস্ট। একটি গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের ৯৮ শতাংশ মানুষ ফোনে কথা বলার শুরুতে ‘হ্যালো’ শব্দটি উচ্চারণ করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হল ‘হ্যালো’-ই কেন? টেলিফোনে কথা বলার সময় আমরা অন্য কোনও শব্দ উচ্চারণ করি না কেন?
উত্তর জানতে উঁকি দিতে হবে ইতিহাসের পাতায়। প্রথমেই মাথায় আসবে টেলিফোনের আবিষ্কর্তা গ্রাহাম বেলের কথা। তবে গ্রাহাম বেল আর হ্যালো শব্দটিকে নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা। যেমন, কারও কারও ধারণা বিজ্ঞানী বেলের প্রেমিকার নাম ছিল হ্যালো। টেলিফোনিক কথোপকথনের শুরুতে প্রেমিকার প্রতি ভালবাসা জানাতে বেল ‘হ্যালো’ শব্দটির ব্যবহার করতেন। এমনকি এই প্রেমিকাকেই নাকি পরে বিয়ে করেন যুগান্তকারী বিজ্ঞানসাধক। প্রচলিত এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যাকে বিয়ে করেছিলেন তাঁর নাম ম্যাবেল গার্ডিনার হুবার্ড। এখন প্রশ্ন ওঠে, তাহলে ‘হ্যালো’ এল কোথা থেকে?
আরও শুনুন: চিঠি পাঠাতে শিখতে হবে সাঁতারও, জলের তলায় ঠিকানা এই আশ্চর্য ডাকঘরের
প্রথমেই জেনে রাখা ভাল, টেলিফোনে বলা মানুষের প্রথম উচ্চারণ হ্যালো ছিল না। টেলিফোন আবিষ্কার হয় ১৮৭৬ সালে। এক বছর পর ১৮৭৬ সালের ১০ মার্চ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমবার ফোন করেছিলেন তার সহকারীকে। কিন্তু সেই সময় তিনি হ্যালো বলেননি। আসলে বেল টেলিফোন আবিষ্কার করলেও ‘হ্যালো’-র জনক অন্য এক ব্যক্তি। তিনিও যুগান্তকারী বিজ্ঞানী। তিনি হলেন বৈদ্যুতিক আলোর আবিষ্কারক থমাস আলভা এডিসন।
আসলে টেলিফোন আবিষ্কারের শুরুর দিনগুলোয় প্রযুক্তিগত কারণেই কোনও একটি সম্ভাষণের প্রয়োজন হয়। এদিকে ১৮৭৭ সালের ১৮ জুলাই থমাস আলভা এডিসন ‘প্রিন্সিপাল অব রেকর্ডেড সাউন্ড’ আবিষ্কারের পরীক্ষানিরীক্ষার কাজে ব্যস্ত হন। সেই সময় তিনি বারবার যে শব্দটি উচ্চস্বরে ব্যবহার করেছিলেন তা এই ‘হ্যালো’। প্রথমবার এই শব্দটিই তিনি তাঁর উদ্ভাবিত ‘পেপার সিলিন্ডার ফনোগ্রাফ’ যন্ত্রে রেকর্ড করেছিলেন।
আরও শুনুন: মিশরে মমির সঙ্গে মিলেছিল মেনুকার্ড, কেন তৈরি হয়েছিল এই তালিকা?
অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী, প্রথমবার হ্যালো শব্দটির ব্যবহার লিপিবদ্ধ হয় ১৮২৭ সালে। অর্থাৎ কিনা প্রায় ২০০ বছর আগে। এরপর টেলিফোনিক প্রযুক্তিতে হাজারও পরিবর্তন হয়েছে। আজকের মানুষের হাতে হাতে ঘুরছে স্মার্ট ফোন। তবু মৃত্যু হয়নি ‘হ্যালো’-র! ফোন ধরলেই সম্ভাষণ হিসেবে উচ্চারণ করা মাস্ট, ‘হ্যালো’!