সমুদ্রের বুকে পাড়ি দেয় যেসব জাহাজ, তাদের সবার ভাগ্যে বন্দরে ফেরা ঘটে না। জাহাজের সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে যায় সেখানে থাকা মানুষেরাও। আর সেইসব জাহাজকে ঘিরেই তৈরি হয় হাজারও জনশ্রুতি। তেমনই এক জাহাজ ফ্লাইং ডাচম্যান। কী হয়েছিল তার শেষ পরিণতি, চারশো বছর পরেও অজানাই থেকে গিয়েছে সে কথা।
জাহাজের গোরস্থান বলা যেতে পারে ‘কেপ অফ গুড হোপ’-কে। সত্যি বলতে ‘গুড হোপ’ নামটাও পর্তুগিজ অভিযাত্রী বার্থেলোমিউ ডিয়াজের অবদান, নইলে আগে এই অঞ্চলের নাম ছিল ‘কেপ অফ স্টর্ম’। এই উপকূলের আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র ডুবোপাথর। যে কোনও সময় তাতে ধাক্কা লেগে সলিলসমাধি ঘটতে পারে জাহাজের। আর এই অঞ্চল ঘিরেই শোনা যায় এক অদ্ভুত ভূতুড়ে গুজব। মাঝে মাঝেই নাবিকরা নাকি এখানে দেখতে পায় কয়েক শতাব্দী আগের একটি জাহাজকে, যার পরিণতি কী হয়েছিল কেউই জানে না। সেই জাহাজ নাকি এখনও অভিশপ্ত আত্মার মতো ঘুরে বেড়ায় সাগরের বুকে। কখনও ধাওয়া করে অন্য জাহাজকে, দিশেহারা জাহাজ ধাক্কা খায় ডুবোপাথরে। কখনও বা কোনও জাহাজের পাশে এসে চিঠি পাঠায় সেখানে। আর সেই চিঠির সঙ্গেই বয়ে আসে অভিশাপ।
আরও শুনুন: গভীর সমুদ্রে ঘুমিয়ে ৯০০ বছরের প্রাচীন তরোয়াল, কারা তা ব্যবহার করত জানেন?
জাহাজটির নাম ফ্লাইং ডাচম্যান। সময়টা, আন্দাজ করা যায় সতেরো শতক। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে অভিযানে বেরিয়েছিল ফ্লাইং ডাচম্যান। সিল্ক, রঞ্জক আর মশলা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল ঘেঁষে নিজের দেশ নেদারল্যান্ডের দিকে ফিরছিল সেই বাণিজ্যতরী। শোনা যায়, ফেরার পথে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়েছিল এই জাহাজ। জাহাজ তখন কেপ অব গুড হোপ-এর কাছাকাছি। একে প্রতিকূল আবহাওয়া, তার ওপর উপকূলবর্তী ডুবোপাথরের ভিড়, সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল জাহাজের নাবিকেরা। কিন্তু কিছুতেই জাহাজ থামাতে রাজি হননি ক্যাপ্টেন হেড্রিক ভ্যান ডের ডেকেন। এমনকি, নাবিকেরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে বিদ্রোহী নেতাকে হত্যা করে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলেন ক্যাপ্টেন।
আরও শুনুন: ভাগ্যিস টেবিলের উপর উলটেছিল খাবারের বাটি! তাতেই জন্ম হল সেলোফেন পেপারের
কিন্তু এরপর ‘ফ্লাইং ডাচম্যান’ জাহাজের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটেছিল, সে কথা আর কেউ বলতে পারে না। জাহাজের কোনও ধ্বংসাবশেষও মেলেনি। সমুদ্রের কিংবদন্তি বলে, দেবতার অভিশাপে নাকি পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত সমুদ্রের বুকে চলতেই থাকবে এই জাহাজ। আর নাবিকদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এই মিথ। জাহাজ বা উপকূল থেকে ‘ফ্লাইং ডাচম্যান’-কে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করে একাধিক লোক।
বাকি গল্প শুনে নিন।