অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধই পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট যুদ্ধ। ব্রিটিশরা উপনিবেশ করতে চেয়েছিল জাঞ্জিবারকে। কিন্তু বেঁকে বসে জাঞ্জিবার দ্বীপের ভূমিপুত্ররা। নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে তারা। এরপরই ধুন্ধুমার যুদ্ধ বাঁধে। সামান্য সময়ের এই যুদ্ধেও কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি খুব কম হয়নি।
দেশে দেশে যুদ্ধ মানে ধ্বংস৷ যুদ্ধ মানে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি৷ যুদ্ধ মানে মৃত্যু৷ কারণ, দু’পক্ষই বন্দুক-কামান-ট্যাঙ্ক-গোলা-বারুদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে একে অপরের ওপরে৷ সবচেয়ে বড় কথা, যুদ্ধ একবার বাঁধলে কবে শেষ হবে কেউ জানে না! কেন এমনটা হয়? যেহেতু একটি যুদ্ধের পেছনে থাকতে পারে গোটা পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির জটিলতম কুটনীতি ও রাজনীতি, সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্বার্থ৷ এমন পৃথিবীতেই ঘণ্টা খানেকেরও কম সময়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল একটি যুদ্ধ! শুনতে অবাক লাগছে তো?
আরও শুনুন: শার্লক হোমসের সঙ্গেই ভারতে হাজির প্রথম পুলিশ গোয়েন্দাও, নয়া ভূমিকায় কলকাতা পুলিশ
ইউরোপের ইতিহাসে এই যুদ্ধটি অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধ বলে পরিচিত৷ শুনতে অবাক লাগলেও, এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল মাত্র 38 মিনিট৷ এই কারণেই বেশ কিছু ইতিহাসবিদ একে যুদ্ধ বলতে রাজি নয়৷ তাছাড়াও শক্তিশালী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দুর্বল জাঞ্জিবারের সুলতানের পরাজয় একপ্রকার নিশ্চিত ছিল৷ জাঞ্জিবার কোথায়? কবেকার ঘটনা?
ভারত মহাসাগরের একটা দ্বীপ হল জাঞ্জিবার৷ জাঞ্জিবার আসলে বর্তমানে আফ্রিকার তানজানিয়ার অংশ৷ 1499 থেকে এলাকাটি পর্তুগিজদের দখলে ছিল৷ 1658 সালে ওমানের সুলতান পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে দখলে নেয় দ্বীপটির৷ কিন্তু 1858 সালে জাঞ্জিবারের শাসক সুলতান মাজিদ বিন সাঈদ জাঞ্জিবারকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন৷ এই ঘটনায় ওমান ক্ষব্ধ হয়, অন্য দিকে ব্রিটিশরা মাজিদকে সমর্থন করে৷ কিন্তু 1886 সালে জাঞ্জিবার সরকারের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ব্রিটিশরা৷ এর মধ্যে মাজিদ বিন সাঈদের মৃত্যুর কারণে নতুন সুলতান হন আলি বিন সাঈদ৷ তিনি ব্রিটিশদের চাপে জাঞ্জিবারকে ব্রিটিশদের উপনিবেশ বলে ঘোষণা করেন ৷ ব্রিটিশদের সঙ্গে এই বিষয়ে চুক্তিও হয়৷ যেখানে শর্ত ছিল, নতুন কাউকে জাঞ্জিবারের সুলতান হতে হলে ব্রিটিশদের অনুমতি লাগবে ৷
আরও শুনুন: কপিরাইট নেই ছবির, তবুও প্রতি বছর নোবেলজয়ীদের মুখ আঁকেন নিকোলাস
এরপর একাধিক ঘটনাক্রম চলে৷ ব্রিটিশ শর্তকে মান্যতা দিয়েই সুলতান বদলায়৷ কিন্তু সুলতান হামাদ বিন তাওয়াইনির মৃত্যুর পর ব্রিটিশদের অনুমতি ছাড়াই নিজেকে সুলতান বলে ঘোষণা করেন সুলতানের ভাইপো খালিদ বিন বারঘাস৷ সাহেবদের যা একেবারেই পছন্দ হয়নি৷ শুরুতে বারঘাস ইংরেজদের হুকুম মেনে নিলেও পরবর্তীকালে নিজের সৈন্যবাহিনী তৈরি করেন। এবং গোটা রাজপ্রাসাদ নিজের দখলে নেন৷ ইতিহাসবিদদের ধারণা, বারঘাসের এই অতি সাহসের পেছনে ছিল জার্মান সমর্থন৷ যাই হোক, অবশেষে 1896 সালে সেই ঐতিহাসিক 38 মিনিটের যুদ্ধ হয়৷
1896 সালের 26 অগাস্ট সকাল 9টা বেজে 2 মিনিটে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ 9টা বেজে 40 মিনিট নাগাদ ব্রিটিশ সৈন্যরা রাজপ্রসাদে ঢুকে সুলতানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়৷ এবং সমাপ্তি হয় যুদ্ধের৷ মোটে 38 মিনিট যুদ্ধ হলেও মৃতের সংখ্যা একেবারে কম ছিল না৷ সুলতান বাহিনীর প্রায় 500 সৈনিকের মৃত্যু হয়েছিল যুদ্ধে৷ অন্যদিকে 1 জন ব্রিটিশ সৈন্যের প্রাণ গিয়েছিল৷
অর্থাৎ কিনা মাত্র ৩৮ মিনিটের যুদ্ধ হলেও যুদ্ধের যে প্রাথমিক চরিত্র- দেশে দেশে যুদ্ধ মানে ধ্বংস৷ যুদ্ধ মানে ক্ষয়ক্ষতি৷ যুদ্ধ মানে মানুষের মৃত্যু৷ এই চরিত্র বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধেও তিলমাত্র বদলায়নি।