একটি গ্রামের সকলেই জানে টাইটরোপ ওয়াক। দিব্য দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে পৌঁছে যায় ছোট থেকে বড়। রাশিয়ার সোভাক্রার কথা জানলে বিস্ময় জাগে। কী করে সম্ভব? গ্রামের সকলেই কীভাবে শিখে গেল মাদারি কা খেল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আমরা অনেকেই দেখেছি ‘টাইটরোপ ওয়াকিং’। যা আসলে শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার খেলা। এই খেলা সার্কাসের অন্যতম আকর্ষণ। শুধু সার্কাসই বা কেন, কলকাতা ময়দানে, হাটে-মাঠে-ঘাটেও মাদারি কা খেল দেখিছি আমরা অনেকেই। সেও কম কঠিন বিষয় নয়। এই খেলা দেখাতে গেলে রীতিমতো অনুশীলন লাগে। একদিনের অনুশীলনেও কাজ হবে না। নিষ্ঠার সঙ্গে দিনের পর দিন অভ্যাস করলে তবে রপ্ত হবে কৌশল। এত কঠিন একটা জিনিস যদি একটি গ্রামের সকলেই জেনে ফেলে! শুধু জানেই না, নিত্য দিনের প্রয়োজনে ব্যাপারটা তাদের কাছে… যাকে বলে জলভাত! এরপর মনে প্রশ্ন আসেই- কোথায় সেই গ্রাম? কীভাবে একটি গ্রামের সকলেই শিখে গেল মাদারি কা খেল?
রাশিয়ার গ্রাম। গ্রেটার ককেসাস পর্বতের কোলে ছোট্ট সুন্দর গ্রামটির নাম সোভাক্রা৷ এমনিতে সে দেশের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে সোভাক্রার বিশেষ পার্থক্য নেই৷ তবে কিনা এই গ্রামের বাসিন্দাদের আশ্চর্য সক্ষমতাই তাদের আলাদা করে দেয়। এই কারণেই স্থানীয়রা গ্রামটিকে ‘টাইটরোপ ভিলেজ’ নামে চেনে। সোভাক্রার প্রায় সকলেই যে সরু দড়ির উপর দিয়ে হাতে বাঁশ বা লাঠির মতো দণ্ড নিয়ে অনায়াশে হেঁটে যেতে পারে। এমনকি খাড়াই পাহাড়ি পথে৷ যে কাজ পেশাদার খেলোয়াড়ের, সেই কাজ জানে আস্ত গ্রাম! কিন্তু রহস্যটা কী? সকলেই কীভাবে শিখে গেল রোপওয়াক?
আরও শুনুন: স্পেনের জাতীয় সংগীতে কথা নেই, শুধুই সুর… কেন জানেন?
এর পেছনে একটা গল্প আছে৷ সে আজ থেকে একশো বছর আগের কথা৷ সেকালে সোভাক্রার বিপজ্জনক পাহাড়ি পথে ব্রিজ ছিল না৷ এদিকে আশপাশের গ্রামে বিয়ের সম্বন্ধ হত সোভাক্রার যুবকদের৷ কিন্তু কীভাবে বিয়ে করতে যাওয়া হবে তবে? প্রতিবেশী পাহাড়ি গ্রামে যাওয়ার ঝুঁকিহীন একটা রাস্তা ছিল বটে৷ তবে কিনা তাতে লেগে যেত অনেক অনেক সময়৷ অন্যদিকে কম সময়ে পাশের গ্রামের বিয়ে করতে যেতে হলে খাড়াই পাহাড়ি পথে ট্রেক করতে হত বরকে৷ বাধ্য হয়ে সেভাবেই যেতেন অনেকে। কিন্তু, একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে৷ আনন্দ অনুষ্ঠান শোকে পরিণত হয় বহুবার। এরপরই সোভাক্রায় রোপওয়াকের সূত্রপাত৷
এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় অবধি লম্বা দড়ি টাঙাত গ্রামের বাসিন্দারা৷ তার উপর দিয়েই শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে শুরু হল যাতায়াত। অবশ্যই এর জন্য অনুশীলন করতে হত হবু জামাই বাবাজিকে। আগে টাইটরোপ ওয়াক শিখে তারপর বিয়ে করতে যেতেন সোভক্রার যুবকরা৷ পরবর্তীকালে দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম সোভাক্রা অনেকটা সুগম হয়েছে বটে৷ তথাপি পুরোনো অভ্যাস বলে কথা! এককালের প্রয়োজন এখন হয়ে উঠেছে প্যাশান!
আরও শুনুন: ভিনগ্রহই ভবিষ্যৎ… মঙ্গল ছাড়িয়ে এবার বুধে পা দেওয়ার স্বপ্ন মানুষের
আজও সোভাক্রার স্কুলগুলোতে ছোটোদের শেখানো হয় দড়ির উপর দিয়ে শরীরের ভারসাম্য রেখে হাঁটার আশ্চর্য বিজ্ঞান৷ আর ঠিক এই কারণেই এ-গ্রামের প্রাপ্ত বয়স্ক সকলেই জানে মাদারি-কা-খেল!