‘মহাপাপ’ করেছে দুই বছরের অবুঝ শিশু। দলিত হয়েও মন্দিরে প্রবেশ করেছিল সে। এই ‘অপরাধে’র জন্যে জরিমানা দিতে হলে শিশুর পরিবারকে। কর্ণাটকের একটি গ্রামের এমন ঘটনায় ছিছিক্কার পড়ে গেছে গোটা দেশে।
একুশ শতকের ভারতেও মাঝেমধ্যেই নিম্নবর্ণের উপর অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এই যেমন, উচ্চবর্ণের কুয়ো থেকে জল তোলায় খুন হতে হয় দলিত কিশোরীকে। ধর্ষণের ‘শাস্তি’ও জোটে। এমন আরও কত লজ্জার ঘটনা, এখনও! এবার অবুঝ শিশু মন্দিরে প্রবেশ করায় তার পরিবারকে দিতে হল মোটা অঙ্কের জরিমানা। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা?
কর্নাটকের কপ্পাল জেলার মিয়াপুর গ্রামের ঘটনা। গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল ওই শিশুর দুই বছরের জন্মদিন। সেই কারণেই বাবা-মা শিশু সন্তানকে নিয়ে স্থানীয় আঞ্জানিয়া মন্দিরে প্রার্থনা করতে যায়। যেহেতু মন্দিরে দলিতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তাই মন্দির চত্ত্বরে দাঁড়িয়েই প্রার্থনা করছিলেন শিশুটির পিতা চন্দ্রু। কিন্তু, সময় আচমকা বৃষ্টি নামে। তখনই শিশুটি দৌড়ে মন্দিরে ঢুকে পড়ে। এই ‘অপরাধে’ই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে শিশুর পরিবারকে। তবে কিনা সেদিনই শাস্তি নির্ধারণ হয়নি।
আরও শুনুন: সিলেবাসে ফিরুক মহাশ্বেতা দেবীর ‘দ্রৌপদী’, চাইছেন শাবানা-অরুন্ধতী
১১ সেপ্টেম্বরে মন্দিরের পুজারি ও স্থানীয়রা রীতিমতো বৈঠক করে শাস্তি নির্ধারণ করে। সেখানেই মন্দির শুদ্ধিকরণের জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য হয়। যদিও জরিমানার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায়। স্থানীয় দলিত জনগোষ্ঠী চান্নাদাসার সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিবাদ করেন। পুলিশের দ্বারস্থও হন তাঁরা। বলা বাহুল্য, এই সম্প্রদায়েরই সদস্য শিশুটির বাবা চন্দ্রু। তবে চন্দ্রু ও তাঁর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চাইছেন না। কেন?
আরও শুনুন: খরার মুখে গ্রাম, ‘দেবতা’কে সন্তুষ্ট করতে নগ্ন করে ঘোরানো হল কিশোরীদের
থানায় অভিযোগ করলে পরিবর্তীতে গ্রামে আশান্তি হতে পারে। শঙ্কিত চন্দ্রু। আরও এক কারণ রয়েছে। সেই কারণ লজ্জার। কী সেই কারণ?
আসলে চন্দ্রুরা এভাবেই উচ্চবর্ণ শাসিত সমাজের মার খেতে অভ্যস্থ যে। জেনে রাখা ভাল, কর্নাটকের কপ্পাল জেলার মিয়াপুর গ্রামে অন্য মন্দিরেও একই ব্যবস্থা। দলিত প্রবেশ নিষিদ্ধ। হ্যাঁ, এই ঘটনা একুশ শতকের। এসব জেনেও ‘ধৃতরাষ্ট্র’ সমাজ।