দেবতার কল্পনা করেই মানুষ প্রতিমা পুজো করে। কিন্তু অনেকে সেই প্রতিমাকে বলে থাকেন পুত্তলিকা বা পুতুল। প্রতিমা পুজোকে তাই পৌত্তলিকতাও বলে থাকেন কেউ কেউ। কিন্তু এ কথা কি ঠিক? সত্যিই কি প্রতিমা পুজো আসলে পুতুলকে পুজো করা? আসুন শুনে নিই, জ্ঞানীজনরা এ বিষয়ে কী বলছেন।
বহুদিন পূর্বে মানুষ যখন ঈশ্বরের আরাধনা করত, তখন তার সামনে কোনও মূর্তি ছিল না। নিরাকার ঈশ্বরেরই উপাসনা হত এককালে। ক্রমে ক্রমে ঈশ্বরকে সাকার কল্পনা করা শুরু হয়। মানুষ তার নিজের অভ্যেস মতো ঈশ্বরের আরাধনাতেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আসে। ভোগ নিবেদন, বস্ত্র পরিবর্তন, শয়ন ইত্যাদি এভাবেই এসেছে।
আরও শুনুন: Spiritual: শিষ্য ঠিক কেমন হলে তবে গুরু তাঁর প্রতি প্রসন্ন হন?
অনেকে আবার এই মূর্তি পুজোকে পৌত্তলিকতা বলে থাকেন। অর্থাৎ, এই যে দেবতার মূর্তি গড়ে বা প্রতিমা বানিয়ে পুজো করা হয়, তা আসলে পুতুল পুজোর শামিল, এমনটাই মত তাঁদের। কিন্তু সত্যিই কি তাই? জ্ঞানীজনেরা বলেন, পুত্তলিকা পুজো আর প্রতিমা পুজোর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। কেউ যখন দেবতার প্রতিমাকে পুজো করছেন, তখন তিনি তো শুধু সেই মূর্তিটিকেই পুজো করছেন না। মূর্তিটিকে অবলম্বন করে ঈশ্বরেরই উপাসনা করছেন। মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তার সামনে যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হয়, তা মূর্তির উদ্দেশে নয়, ঈশ্বরের উদ্দেশেই। অর্থাৎ তিনি একটি প্রতীক সামনে রেখে ঈশ্বরেরই উপাসনা করছেন। তাই প্রতিমা পূজক কখনোই পৌত্তলিক নন।
আরও শুনুন: Spiritual: পুজোর সময় প্রদীপ জ্বালানো হয় কেন? এর মাহাত্ম্য কী?
আবার এ কথাও ঠিক যে, অনেকেরই উপাসনার ক্ষেত্রে মূর্তির প্রয়োজন পড়ে না। বলা হয়ে থাকে, যাঁরা প্রকৃতির অতীত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছেন, তাঁদের আর প্রতিমার প্রয়োজন হয় না। তাঁরা ঈশ্বরের স্বরূপ উপলব্ধি করেছেন। তাই আলাদা আলাদা দেবতার মূর্তি গড়ে উপাসনা আর করতে হয় না তাঁদের।
এইখানে ভক্তমনে প্রশ্ন জাগে, যাঁরা আলাদা আলাদা দেবতার আরাধনা করেন, তাঁরা কি তবে ঈশ্বরের আরাধনা করছেন না! গীতায় শ্রী কৃষ্ণ এর উত্তর দিয়ে বলেছেন, যাঁরা আলাদা আলাদা দেবতার পূজা করেন, তাঁরাও ঈশ্বরেরই পূজো করেন, কিন্তু অবিধিপূর্বক। তার ফল কী হয়? ভগবান বলছেন, আমিই সকল যজ্ঞের ভোক্তা ও ফলদাতা। কিন্তু যাঁরা তাঁকে সম্যকরূপে জানে না, তাঁরা সংসারে পতিত হয়। অর্থাৎ, আমাদের এখানে বুঝে নিতে হবে এই অবিধিপূর্বক কথার অর্থ।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।