তালিবানের অত্যাচারের খবর সারা বিশ্বের কাছেই নতুন কোনও কথা নয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার আফগানিস্তান দখলের পর তাদের একের পর এক কীর্তি যত সামনে আসছে, দেখা যাচ্ছে নৃশংসতার বিচারে তারা রোজ ছাপিয়ে যেতে পারে নিজেদেরকেই। সম্প্রতি এমন বিশ্বাসকেই আরও জোরদার করল দুই সাংবাদিকের ছবি। তাঁদের রক্তাক্ত দেহের ছবি দেখে শিউরে উঠছেন সারা পৃথিবীর মানুষ।
সম্প্রতি টুইটারে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন আমেরিকান সাংবাদিক মার্কাস ইয়াম। সেখানেই দেখা যাচ্ছে ওই দুই সাংবাদিককে। এতিলাত-ই রোজ-এর দুই সাংবাদিক তাকি দরিয়াবি এবং নেমাত নকদি-কে মঙ্গলবার নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল তালিবান। ছবিতে তাঁদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, রক্ত জমে থাকার দাগ থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তালিবানের অত্যাচারের চিত্র। বোঝা যাচ্ছে, ভয় দেখিয়ে আফগানভূমের সব প্রতিবাদের টুঁটি টিপে ধরতে চাইছে তালিবান। সেদেশের টোলো নিউজ জানিয়েছে, তাদের ফটোগ্রাফার ওয়াহিদ আহমদিকেও গ্রেপ্তার করেছে তালিবান, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ক্যামেরাও।
আরও শুনুন: তাক করা তালিবানি বন্দুকের মুখে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আফগান মহিলা, কুর্নিশ বিশ্ববাসীর
১৫ অগস্ট কাবুল দখল করে নেয় তালিবান। প্রায় গোটা আফগানভূমেই তাদের নিয়ন্ত্রণ চলছে এখন। উচ্চশিক্ষা, গানবাজনা, খেলাধুলা, সমস্ত বিষয়েই নেমে আসছে একের পর এক ফতোয়া। কিন্তু যেভাবে সাধারণ আফগান নাগরিক, বিশেষত মেয়েদের সবরকম অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তাতেই ঘনিয়ে উঠছে বিক্ষোভের আগুন। তারই বড়সড় প্রকাশ দেখা যায় গত মঙ্গলবার। এদিন সকালে আফগানিস্তানের পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় কাবুলের রাস্তায়। মহিলাদের জমায়েতে যোগ দেওয়া, এমনকি একা রাস্তায় বেরোনোর ওপর জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞাকে উড়িয়ে দিয়ে মিছিলে যোগ দেন অসংখ্য মহিলা। ‘স্বাধীনতা চাই’ স্লোগান দিয়ে তাঁরা দাবি করেন, পাকিস্তান হোক বা তালিবান, তাঁদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। বিক্ষোভ থামাতে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তালিবান। মহিলাদেরও রেয়াত করেনি তারা। গুলির আঘাতে বেশ কয়েক জন হতাহত হয়েছেন বলেও খবর। পাশাপাশি, সাংবাদিকদেরও রেহাই মেলেনি। আফগানভূমের এই বিক্ষোভ নজরে রাখছিলেন যেসব সাংবাদিক, তাঁদের মধ্যেও অনেককে আটক করা হয়।
আরও শুনুন: শ্রীনগরে উধাও ড্রাই ফ্রুট, আফগানিস্তান তালিবানি কবজায় যেতেই রং হারাচ্ছে কাশ্মীরের বিয়ের মরসুম
আফগানিস্তান দখলের লড়াই চলাকালীনই তালিবানের হামলায় নিহত হয়েছিলেন বিখ্যাত চিত্রসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি। পরে তাঁর বিকৃত মুখের ছবি দেখে অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন, তালিবানের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন তিনি। সেই মর্মান্তিক খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সামনে এল সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচারের ছবি। সব মিলিয়ে, তালিবানের কথা আর কাজে মিল না থাকার আশঙ্কাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমশ।