ভাবতে পারেন কি, এককালে এক বাঙালি নিজেই ব্যবসা করতেন আমেরিকা পর্যন্ত? তাও সেই যুগে, যখন কিনা কালাপানি পেরোলে জাত খোয়াতে হয়। তা জাত তো যায় মানুষের। টাকার আবার জাত কী! তাই সাহেবদের টাকাতেই সিন্দুক ভরতেন এই বাঙালি বাবু।
তিনি নাকি বাংলার প্রথম কোটিপতি। কলকাতায় বসেই আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা চালাতেন তিনি। অথচ জীবনের শুরুতে স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না এমন কথা। সেই কোন ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছেন। ঠাকুমার কাছে মানুষ। ঠাকুমাই বা দুজনের পেট চালাবেন কী করে! হাটখোলার দত্তবাড়ি সেকালে কলকাতার নামকরা বড়োলোক বাড়ি। সে বাড়িতেই খুঁজেপেতে রাঁধুনির কাজ জোটালেন তিনি। বাপ-মা-মরা নাতিটারও তো একটা হিল্লে করতে হবে।
আরও শুনুন: অঞ্জনের গানে নয়, বাস্তবেও ছিলেন বেলা বোস, চেনেন সেই সাহসিনীকে?
হিল্লে একটা হয়েও গেল। বাড়ির মালিক বাবু মদনমোহন দত্তের বিশাল ব্যবসা। সেখানেই হাতে হাতে কাজ করতে লাগল ছোট ছেলেটা। তবে পরিশ্রমী। বুদ্ধিশুদ্ধিও আছে। বাবুর নজরে পড়তে দেরি হল না। বাবুর জাহাজের ব্যবসা তদারকি করার অনেকটা ভার এসে পড়ল তার হাতে। একবার মালিক জাহাজঘাটায় পাঠালেন, নিলামে কিছু জিনিসপত্র খরিদ করতে। দেখেশুনে সে কিনে বসল একটা ভাঙা জাহাজ। আর ওই যে বলে, ভগবান যখন দেন, দুহাত ভরেই দেন। সেই ভাঙা জাহাজ থেকে লাভ হল এক লক্ষ টাকা! কিন্তু এত সৎ, সমস্ত টাকা এনে তুলে দিল বাবু মদনমোহন দত্তের হাতেই। মুগ্ধ হয়ে তিনি সব টাকা ফিরিয়ে দিলেন এই বিশ্বস্ত কর্মচারীকেই। সামান্য সরকার থেকে লক্ষপতি হয়ে গেল সেই যুবক, রামদুলাল।
আরও শুনুন: Biryani: বাঙালির বিরিয়ানিতে আলুর ঠাঁই হল কীভাবে?
পুঁজি আছে, সুতরাং স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে আর বাধা নেই। উৎসাহ দিলেন মদনমোহন দত্ত নিজেই। আমেরিকা তখন সদ্য সদ্য ব্যবসার সূত্রে ভারতে আসা শুরু করেছে। কিছুদিন আগেই স্বাধীন হয়েছে সে দেশ, এবার তার ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র চাই। এই সময় বস্টন, সালেম, ফিলাডেলফিয়া, নিউ ইয়র্ক থেকে প্রচুর জাহাজ বাংলায় আসত। নিয়ে আসত লোহা, ব্রান্ডি, নানা সামুদ্রিক মাছ, গোরুর মাংস, মোমবাতি— এ সব। আর বিনিময়ে কলকাতা থেকে তারা নিয়ে যেত চা, চিনি, নীল এবং নানা ধরনের বস্ত্র। এই কাজে আমেরিকানদের সহায়তা করতেন এ দেশীয় মুৎসুদ্দি বা ‘বেনিয়া’-রা। তাঁদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিলেন রামদুলাল।
বাকি গল্প শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।