শান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই আফগানিস্তানের। তালিবানের কার্যকলাপেই স্পষ্ট, পঞ্জশির দখলে না আসা পর্যন্ত হাল ছাড়বে না তারা। পঞ্জশির কাঁটা উপড়ে ফেলতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে তালিবান। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিল তালিবান। কেবল পঞ্জশির নয়, অনুরূপ কোনও বিরোধকেই প্রশ্রয় দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল তারা।
সদ্য অধিকৃত আফগানিস্তানে কোনোরকম বিরোধিতা বরদাস্ত করতে নারাজ তালিবান। সাফ জানিয়ে দিলেন তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ। কাবুলে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ঘোষণা করলেন, যুদ্ধ শেষ। এবার আফগানভূমকে শান্ত দেখতে চায় তালিবান। যদিও এই শান্তি কামনার আড়ালে গোপন রইল না বিরোধীদের প্রতি তাদের কড়া হুঁশিয়ারি। মুজাহিদের বক্তব্য, কেউ অস্ত্র তুলে নিলে তাকে গণ্য করা হবে দেশের শত্রু বলে। এবং দেশে কোনোরকম অরাজকতা তৈরি করতে চাইলে তাদের মোকাবিলা করা হবে পঞ্জশিরের মতো করেই।
আরও শুনুন: তালিবানদের জয়ে কেন উল্লাস! ভারতীয় মুসলিমদের কটাক্ষ করলেন Naseeruddin Shah
১৫ আগস্ট আফগানভূমে নিজেদের দখল কায়েম করেছিল তালিবান। তাদের শাসন জারি হয় কাবুল-সহ আফগানিস্তানের ৩৩টি প্রদেশে। কিন্তু এই ঝটিকা সাফল্যের মধ্যেও কাঁটার মতো বিঁধছিল পঞ্জশির প্রদেশ। আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালিবান-বিরোধী লড়াই জারি হয় সেখানে। পরে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ-ও। তালিবানের বিজয়রথ বারবার ধাক্কা খেয়েছে পঞ্জশিরের সশস্ত্র প্রতিরোধের সামনে। কিন্তু সোমবারই তালিবান দাবি করেছে, পঞ্জশির দখল করে ফেলেছে তারা। এমনকি, আহমদ মাসুদের বাড়িও এখন তাদের কবজায়। মাসুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তালিব যোদ্ধারা, এমন একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। পঞ্জশিরের সরকারি ভবনেও তালিবানি পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। যদিও তাদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বিরোধীরা। ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্স অব আফগানিস্তান’-এর তরফে পালটা টুইট করে দাবি করা হয়েছে, পঞ্জশিরে এখনও লড়াই চালাচ্ছে প্রতিরোধ বাহিনী। স্বাধীনতা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
আরও শুনুন: নতুন করে তালিবানি ফতোয়ার মুখে আফগান মেয়েরা, থামল গানবাজনাও
প্রসঙ্গত, রবিবারই যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছিল নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দিয়েছিল তারা। যদিও সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে তালিবান। সেদিনের যুদ্ধে নিহত হন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মুখপাত্র ফাহিম দাস্তি। পঞ্জশির ঘিরে ফেলে গণহত্যার পরিকল্পনা করছে তালিবান, এই মর্মে রাষ্ট্রসংঘের কাছে সাহায্যের আবেদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ। কোনও পরিস্থিতিতেই তালিবানের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না বলে বদ্ধপরিকর সালেহ। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি একান্তই প্রতিকূল হলে নিজের জন্য দুটি বুলেট বরাদ্দ করবেন তিনি।
শেষমেশ পরিস্থিতি কোনদিকে গড়াবে, সে কথা সময়ই বলবে। কিন্তু আফগানভূমে যে কোনোরকম প্রতিবাদী স্বর যে মুছে দিতে চাইছে তালিবান, সে কথাই স্পষ্ট করে দিল তালিবান মুখপাত্রের সাম্প্রতিক বিবৃতি।