‘গোলন্দাজ’ ছবিতে এই মানুষটির ভূমিকায় অভিনয় করছেন বাঙালির সুপারস্টার দেব। এক বলিষ্ঠ পুরুষের শেকল ভেঙে ফুটবলে লাথি মারার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ছবির পোস্টারে। জানেন কি, কে এই নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী? লিখলেন অর্পণ গুপ্ত।
বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে দীর্ঘদিন ‘লাভার বয়’-ইমেজ ছিল যাঁর, সেই দেব নিজেই বলছেন, আসন্ন ছবি ‘গোলন্দাজ’ তাঁর কেরিয়ারের ম্যাগনাম ওপাস। কিন্তু এই ছবিতে দেব কোনও কাল্পনিক চরিত্রে অভিনয় করছেন না। সিনেমার সেই মানুষটি উনিশ শতকের কলকাতা তথা ভারতবর্ষের ক্রীড়া ইতিহাসের এক প্রাণপুরুষ। বাঙালির ফুটবলের জনক তিনি। নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।
আরও শুনুন: Tokyo Paralympics: প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে সাফল্যে পৌঁছানোর রাস্তা চেনাচ্ছেন অবনী-ভবিনারা
কলকাতার বিখ্যাত সর্বাধিকারী পরিবারের ছেলে নগেন্দ্রপ্রসাদ। ছেলেবেলা থেকেই ডাকাবুকো। ১৮৭৭ সালের একদিন, গঙ্গাস্নানে যাওয়ার পথে পড়ল ফোর্ট উইলিয়ামের পাশে ‘ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব’-এর মাঠ। গোরা সৈন্যরা বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। সেসময়ে ব্রিটিশ সেনাদের বিনোদনের জন্য কলকাতা ময়দানে রাগবি বা ফুটবল খেলা হলেও ভারতীয়দের অংশগ্রহণের কোনও সুযোগ ছিল না। মুগ্ধ হয়ে খেলা দেখছিল বছর আটের ছেলেটি। হঠাৎ বলটি এসে পড়ে একেবারে তার সামনেই। একজন সৈন্য বলে ওঠে, ‘কিক ইট!’ পা দিয়ে মেরে বলটা ফেরত পাঠায় ছেলেটি। বাঙালির পায়ে সে-ই প্রথম ফুটবল শট।
আরও শুনুন: Olympics: ফুটবলে এশিয়ার প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভারতেরই
হেয়ার স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে একটি দল গড়ে ফেললেন নগেন্দ্রপ্রসাদ। চৌরঙ্গীর ম্যান্টন অ্যান্ড কোম্পানির দোকান থেকে ফুটবল ভেবে কিনে নিয়ে চলে এলেন একটি সাদা রাগবি বল। পরের দিনই স্কুলের মাঠে খেলা শুরু। রীতিমতো ভিড় জমে গেল কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। তাদের খেলা চোখে পড়ল প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ অধ্যাপক জি এ স্ট্যাক-এর। তিনিই তারপর ফুটবল কিনে এনে খেলা শেখাতে লাগলেন তাদের।
স্কুল পেরিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ। পড়াশোনার পাশাপাশি চলছে ফুটবল। ঠিক করে ফেললেন যে এই খেলাটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সারা বাংলায়। বুঝলেন, তার জন্য দরকার সংগঠন। তৈরি করলেন বয়েজ ক্লাব, ওয়েলিংটন ক্লাব, ফ্রেন্ডস ক্লাব ও প্রেসিডেন্সি ক্লাব। এই বয়েজ ক্লাব-ই সম্ভবত ভারতীয়দের তৈরি প্রথম ফুটবল সংগঠন। আর ওয়েলিংটন ক্লাব প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে ময়দানে ব্রিটিশ ক্লাবগুলির পাশে তাঁবু ফেলে।