হিন্দু দেব-দেবীদের দেখা যাচ্ছে আপত্তিজনক অবস্থায়। যদিও তা বইয়ে আঁকা ছবি, কিন্তু তাতেই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে হিন্দু ধর্মের মর্যাদা। এই অভিযোগে গুজরাটে পুড়ল ‘কামসূত্র’। বজরং দলের সদস্যদের এই কর্মকাণ্ডে উঠে এসেছে একাধিক প্রশ্ন।
গুজরাটের আহমেদাবাদে পুড়ল কামসূত্র। প্রাচীন এই বই নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু যে-বইটি আহমেদাবাদের বুক স্টলে সাজানো ছিল, তার পাতায় পাতায় ছিল নানা ছবি। সেই ছবিতে হিন্দু দেব-দেবীকে দেখানো হয়েছে আপত্তিজনক বা অশ্লীল অবস্থায়। এই অভিযোগেই বইয়ের ওই কপিটি পুড়িয়ে দেন বজরং দলের সদস্যরা। এই বই পুনরায় বিক্রি করা হলে তার পরিণাম ভালো হবে না বলেও স্টল মালিককে হুঁশিয়ারি দিয়ে যান তাঁরা।
আরও শুনুন: আফগানিস্তানের নয়া আতঙ্কের নাম ISIS-Khorasan, কী রহস্য রয়েছে এর আড়ালে?
বাৎস্যায়ন রচিত সংস্কৃত কামসূত্র গ্রন্থটি বহু প্রাচীন। কাম শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়সুখ। সূত্র অর্থে সুতো। অর্থাৎ, মানুষের যৌনাচার সম্পর্কিত বিভিন্ন উপদেশমালা যে বইয়ে একসূত্রে গ্রথিত হয়েছে, তাই-ই কামসূত্র। মনে করা হয়, কামসূত্র ভারতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। প্রচলিত মতে, এই গ্রন্থের রচয়িতা শিবের অনুচর বা দ্বাররক্ষক নন্দী। শিব ও পার্বতীর রমণকালে যে পবিত্র বাণী উচ্চারিত হয়েছিল, তা শুনে তিনি মুগ্ধ হন। এবং পরবর্তীকালে তা মানবাজাতির জন্য লিপিবদ্ধ করে যান। সে যাই হোক, বাৎস্যায়ন রচিত কামসূত্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার নিজস্ব ছাপ বা প্রভাব ফেলেছে। কেননা মানুষের যৌনাচার সম্পর্কিত বিভিন্ন উপদেশ, তত্ত্ব ও ব্যবহারিক নির্দেশের কথা এই বইতে থেকে গিয়েছে, যা বহুযুগ ধরে মানুষের কৌতূহল মিটিয়েছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের আকর হিসেবে তাই বিবেচিত হয়েছে এই বই। খুব প্রত্যাশিত ভাবেই, শিল্পীর কল্পনাকেও উসকে দিয়েছে এই বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়। যৌনমিলন সম্পর্কিত যে যে তত্ত্ব ও ব্যবহারিক নির্দেশ বিধৃত হয়েছে, তা নানা সময়ে তুলিকলায় ফুটিয়ে তুলেছেন চিত্রকররা।
আরও শুনুন: সিলেবাস থেকে বাদ মহাশ্বেতা দেবীর গল্প, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে বিতর্ক
প্রশ্ন হল, এত প্রাচীন একটি বই নিয়ে বজরং দলের সদস্যদের আপত্তি হল কেন? সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিও। যেখানে বইটি হাতে নিয়ে আপত্তির জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছেন বজরং দলের জনৈক প্রতিনিধি। তাঁদের বক্তব্য, বইয়ের যে কপিটি বুক স্টলে ছিল, সেখানে পাতায় পাতায় এমন সব ছবি রয়েছে, যেখানে হিন্দু দেবদেবীকে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখানো হয়েছে। যা তাঁদের কাছে, অশ্লীল। এরই প্রতিবাদে তাঁরা ওই বুক স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই বইটিতে অগ্নিসংযোগ করেন।
যদিও তাঁদের এই কাজ একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নেটদুনিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, যে দেশে এতদিন ধরে কামসূত্র রয়েছে, অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র রয়েছে, সেখানে সাধারণ কয়েকটি ছবিতে কী এমন হল যে, হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্যে আঘাত লাগবে? জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ নিয়েও কি তবে আপত্তি উঠবে? প্রশ্ন নেটিজেনদের। যদিও তার উত্তর নেই কারো কাছেই।