ফুটবল দুনিয়ায় মেসি-রোনাল্ডো চর্চা চিরন্তন। সম্প্রতি মেসির বার্সা ছাড়ার সংবাদ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু রোনাল্ডো জৌলুসে ঝলসে গেল অন্য সব আলোচনা। নস্ট্যালজিয়ায় ভাসল ইংল্যান্ডের শহর। ঘরে ফেরার গানে সুর মেলালেন রোনাল্ডো ভক্তরা। মহাকাব্যের নতুন অধ্যায় রচনা করতেই তো ঘর ওয়াপসি ‘অর্জুন’ রোনাল্ডোর! নিত্যনতুন লক্ষ্যভেদের নেশা যাঁর পুরনো অভ্যেস। রোনাল্ডোর মতো কিংবদন্তিরা যে স্বপ্নের সওদাগর। লিখলেন সুলয়া সিংহ।
সালটা ২০০৯। দীর্ঘ ছ’বছরের বন্ধুত্বে ইতি টেনে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে বিদায় জানিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। চোখের কোণ ভিজেছিল সতীর্থদের। মহাতারকাকে হারিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল রেড ডেভিলস শিবির। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিঃশব্দে লেখা হয়েছিল মন খারাপের কাহিনি। না, ২০০৯ সালে এসব কিছুই হয়নি। বরং দলের ‘ভিলেন’ বিদায় নেওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন সতীর্থদের অনেকেই। ঔদ্ধত্য আর বিশৃঙ্খলার ঝড়ে তোলপাড় হয়ে ওঠা ম্যান ইউতে যেন শান্ত বাতাস বয়েছিল। ম্যাঞ্চেস্টার এয়ারপোর্টের টানেল দিয়ে যেভাবে ফারারি ছুটিয়েছিলেন পর্তুগিজ তারকা, তাতে মুখ লুকিয়ে বিরক্তিই প্রকাশ করেছিলেন তাঁর তথাকথিত ‘কাছের মানুষ’রাও। হ্যাঁ, এটাই সত্যি।
আরও শুনুন: Lionel Messi: শিল্পের শহরে এবার শিল্পীর পায়েই আঁকা হবে ফুটবলবিশ্বের নতুন ছবি
মাঝখানে কেটে গিয়েছে ১২টা বছর! ঔদ্ধত্য, অহংকার, অর্থ, ঐশ্বর্য, খ্যাতি, প্রতিপত্তি- সবই উত্তরোত্তর বেড়েছে। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার অপেক্ষা। বিশৃঙ্খল, বদমেজাজি, একরোখা ছেলেটিকেই বারবার ফিরে পেতে চেয়েছে অ্যালেক্স ফার্গুসনের ভিটে। কেন? উত্তর সকলের জানা। ফুটবল পায়েও যে শিল্প রচনা করা যায়, নিখুঁত ফ্রি-কিকে যে চুপ করিয়ে দেওয়া যায় গ্যালারি থেকে উড়ে আসা সব কটাক্ষকে, রক্তমাংসের মানুষ হয়েও যে ঐশ্বরিক ক্ষমতার মালিক হওয়া যায়, সেটাই তো প্রতিবার বুঝিয়েছেন তিনি। ফুটবলের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্স তো নতুন লাভস্টোরির জন্ম দিয়েছে প্রতিটা মরশুমে। সাফল্যের জেদ, জয়ের খিদেও তো বাড়িয়েছেন তিনি। তাতেই তো মাঠ আর মাঠের বাইরে তাঁর সমস্ত ‘স্বার্থপরতা’ কফিন বন্ধ হয়েছে। পাঁচ-পাঁচটা ব্যালন ডি অরের দখল তো অতিমানবরাই নিতে পারেন। তিনিও পেরেছেন।
আরও শুনুন: Tokyo Olympics -এর রুপোর মেডেল নিলামে তুললেন এই খেলোয়াড়, কিন্তু কেন?
এহেন রাজপুত্রকে কি আর দূরে ঠেলে রাখা যায়? তাই তো রাজত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার তাগিদটাও বেড়ে গিয়েছিল রেড ডেভিলসের। আর তিনি? লাল গ্যালারি মোড়া ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ওই সবুজ ঘাস তো তাঁর বড়ই চেনা। বড্ড বেশি আপন। তাঁর কৈশোরের খুনসুটি, যৌবনের রসায়ন- সবটুকুর সাক্ষী ওরা। ওর কাছে ফিরতে তাই রেকর্ড বুকে লেটার মার্কস থাকার প্রয়োজন হয় না। অর্থের টানাপোড়েনও সেখানে গৌণ। এ যে মায়ের কোলে ফেরার স্বাদ। সে স্বাদ কি মূল্যে বিচার্য? তাই তো ঘরে ফিরে অদ্ভুত এক তৃপ্তি অনুভব করছেন রোনাল্ডো। কেরিয়ারের সায়াহ্নে আপনজনের কাছে ফেরার সৌভাগ্যই বা কতজনের হয়। তাঁর হয়েছে। আর ঔদ্ধত্য, অহংকার? নাহ্, আজ আর কিছুই ধোপে টেকে না। আজ তাঁর নাম হি কাফি হ্যায়। ম্যান ইউর সঙ্গে আজ তাঁর মিলন মুহূর্ত ঐতিহাসিক। ফুটবল বিশ্বের ট্রান্সফারের ইতিহাসে শিহরণ জাগিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়।