তিনি মা হলেন। সমস্ত লোকলজ্জাকে উড়িয়ে দিয়ে, সামাজিক কাচের দেওয়াল ভেঙে তিনি একা একাই মা হলেন। নুসরত জাহান। এতদিন তাঁর পরিচয় ছিল তিনি অভিনেত্রী। পরবর্তীতে সাংসদও। কিন্তু আজ তাঁর মাতৃত্ব যেন সেই সব পরিচয় ছাপিয়ে আরও বড় হয়ে উঠেছে। কেননা এই নতুন পরিচয়ের ভিতরই রয়ে আছে একজন একা মানুষের হেঁটে যাওয়া। সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে দৃঢ়, নিশ্চিত পদচারণার সাহস। নুসরত জাহান আজ ব্যতিক্রমের সমনাম।
কুন্তী তাঁর সন্তানকে জলে ভাসিয়েছিলেন। বাধ্য হয়েই। নুসরত জাহান তাঁর সন্তানের জলে ভেসে যাওয়া আটকে দিলেন নিজের হাতে। তিনি মা হলেন। সন্তানের পিতৃপরিচয়ের প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েই মা হলেন। এই ক-টা বাক্যের মধ্যেই থেকে গেল নারীপ্রগতির কয়েক যোজন দীর্ঘ পথ। সংগ্রামের পথ। ক্লান্তি ও শ্রান্তির পথ। তবু হেরে না-যাওয়া পথ। নুসরতের একটা ছোট্ট পদক্ষেপ। সেই পথকেই যেন আলোকময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দিল অনেকখানি।
আমাদের শহরে যে একজন নুসরত জাহান লুকিয়ে ছিলেন, আমরা তা খেয়াল করে দেখিনি।
আরও শুনুন: World Breastfeeding Week: সন্তানকে প্রকাশ্যে স্তন্যদান, ছবি পোস্ট করে TABOO ভাঙার ডাক অভিনেত্রীর
এই ক-দিন আগেও তাঁর পরিচয় ছিল তিনি একজন অভিনেত্রী। বাংলা ভাষায় যে সব বাণিজ্যিক সিনেমা হয়, সেখানেই দেখা যায় তাঁকে। জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু সিনেশিল্পের আলপনা আঁকা শৌখিন গোছানো বারান্দায় তাঁর যে তেমন জায়গা ছিল, এমন দাবি করা অযৌক্তিক। কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। আর পাঁচজন বাণিজ্যিক ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী যেভাবে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যান, নুসরতও এগিয়েছেন সেভাবেই। অর্থ ও লোকপ্রিয়তা এসেছে হাত ধরাধরি করে।
আরও শুনুন: Stereotype ভাঙছে মেয়েরা, সমাজের ভাবনায় কি আসবে পরিবর্তন?
কিছুদিন বাদেই রাজনীতির আঙিনায় পা পড়ল তাঁর। অনেকে অবাক হয়েছিলেন। আলোচনা, সমালোচনা – যেমন হয়, বাঙালির চায়ের আড্ডায়, খানিকটা যুক্তিহীন, কথার পিঠে কথা, বেশিরভাগই আকথা, কুকথা, – তেমনটা শুরু হয়েছিল। রাজনীতি চলে তার নিজস্ব সমীকরণে। সে-পাড়ার জহুরিরা জানেন কাকে কোন ভূমিকায় নামালে বাজিমাত অবধারিত। একদিন আমরা সবিস্ময়ে খেয়াল করলাম, সমস্ত কথার আবর্জনা পেরিয়ে নুসরত জাহান সাংসদ হয়েছেন। জাতীয় সংবাদমাধ্যম যখন এই তরুণী অভিনেত্রী সাংসদের উপর আলো ফেলছে, তখন অতি সন্তর্পণে ঘটে যাচ্ছে আর-এক ঘটনা। অভিনেতা, অভিনেত্রী মানেই কেরিয়ার শেষে বয়সকালে খানিক রাজনীতির এক্কা-দোক্কা। কিন্তু এ তো তা নয়। একজন অভিনেত্রী, সম্ভবত কেরিয়ারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যাঁর থাকার কথা, ঠিক সেই সময় তিনি রাজনীতিতে আসছেন স্বেচ্ছায়।
এর মধ্যেই বিয়ে। তাও ভিন্নধর্মের পাত্রকে বেছে নিয়ে। আবার কিছুদিনের মধ্যেই সেই বন্ধন থেকে বেরিয়ে আসা। সম্পর্ক ভাঙার কাচের গুঁড়ো কি অন্তরে বেঁধেনি তাঁকে! হয়তো বিঁধেছিল। কিন্তু যে-বন্ধন স্বীকারে তিনি নিজে অস্বস্তিতে পড়ছিলেন, তাকে যেনতেনপ্রকারে স্বীকার করেই রয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি নুসরত। বেরিয়ে এলেন। অনেকেই এরকম বেরিয়ে আসেন। কিন্তু নুসরত যেভাবে বেরিয়ে এলেন, যে প্রচ্ছন্ন ঔদ্ধত্যে, একা চলার সাহসে বেরিয়ে এলেন, তা সহজপাচ্য নয়। এবারও তাই তাঁকে নিয়ে চর্চা হল বিস্তর।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।