কথায় বলে, দান-ধ্যানে পুণ্য হয়। সে কথা সত্যি বটে। তবে কীরকম দান আসলে শ্রেষ্ঠ? মহাপুরুষরা আমাদের অকাতরে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। সে দানের স্বরূপটি কেমন? আমরা কি পৌঁছতে পারি তার কাছাকাছি।
দানধ্যানের প্রতি আমাদের শাস্ত্র বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছে। সেকালে রাজারা, ধনী ব্যক্তিরা যত পারতেন দান করতেন। বলা হয়, এই দানে যে পুণ্য লাভ হয়, তার তুল্য আর কিছুই নেই।
আরও শুনুন – Spiritual: জগতে চণ্ডীপাঠের মাহাত্ম্য প্রচার করলেন কে?
কেন এমনটা বলা হত? আমরা যদি একটু ভালো করে দখি, দেখব এই দান অভ্যাসের মাধ্যমেই আমরা ঈশ্বরলাভের পথে এগিয়ে যেতে পারি। শাস্ত্র বলে, বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে ঈশ্বরে স্থাপন করতে। সেই বিষয়বাসনা থেকে যদি মনকে সরিয়ে রাখতেই হয়, তবে সবার আগে এই বিষয়ের মোহ ত্যাগ করতে হবে। দান যেন তারই প্রথম ধাপ। যদি এমনটা আমরা ভাবতে পারি, সবই ঈশ্বরের জিনিস, তাহলে আর দানে কার্পণ্য আসে না। আবার খেয়াল করে দেখুন, এই যে দানপ্রথা – এর মাধ্যমেই কেমন থেকে যাচ্ছে সম্পদের বন্টনের দিকটাও। এই পৃথিবীতে ঘটনাচক্রে যার আছে কিছু বেশি, আর যার কিছু নেই – তাদের মধ্যে কী অপূর্ব যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায় এই দানের কল্যাণে। দান তাই এক সুন্দর অভ্যাসই নয়, জরুরিও বটে।
আরও শুনুন – Spiritual: শাস্ত্রে গৃহস্থদের পাপ মুক্তির জন্য কী ধরনের যজ্ঞবিধি রয়েছে?
তবে এই দান তখনই সার্থক হয়ে ওঠে, যদি তা থেকে ‘আমার’ বা ‘আমি’ বোধকে সরিয়ে ফেলে যায়। অহং ত্যাগ বা ‘আমি’কে দূরে রাখার কথা বারেবারেই উচ্চারিত হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে। এইটেই ঈশ্বরলাভের গোড়ার কথা। ফলত, দানের কথাই যদি ধরা হয়, সেখানেও দেখব নিহিত আছে একই সূত্র। যা দেওয়া হচ্ছে, তা যে আমার জিনিস, আমি দিচ্ছি, এই বোধ থাকলে দানের ভিতর খানিক অহংকার এসে জমা হয়। সেটি থাকলে কিন্তু আসল চিত্তশুদ্ধিই হবে না।
ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ একদিন এক ভক্তকে এ বিষয়ে চমৎকার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি তিন ত্যাগ করেছিলাম – জমিন, জরু, টাকা। রঘুবীরের নামে জমি ও-দেশে রেজিস্ট্রি করতে গিছলাম। আমায় সই করতে বললে। আমি সই করছিলুম না। ‘আমার জমি’ বলে তো বোধ নাই। কেশব সেনের গুরু বলে খুব আদর করলে। আম এনে দিলে। তা বাড়ি নিয়ে যাবার জো নাই। সন্ন্যাসীর সঞ্চয় করতে নাই।’
এই এক কথাতেই দানের সারকথাটি যেন তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। দান করা ও দান গ্রহণ – এ দুয়ের ক্ষেত্রেই ঠিক কেমন ভাব থাকা উচিত, ঠাকুর তা স্পষ্ট করে দিলেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।