ঈশ্বরের সাধনা করার প্রথম ধাপ হল মনকে সংযত করা। তার জন্য কেউ কেউ করেন বাহ্যিক কিছু আচার অনুষ্ঠান। কেউ আবার সেই সব অস্বীকার করেন। প্রশ্ন জাগে, বাহ্যিক আচারের কি আদৌ দরকার আছে? সেই কথাই শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ইন্দ্রিয় আমাদের বেপথু করে। চালিত করে ভুল দিকে। জ্ঞানীজনরা বলেন, ঈশ্বরলাভের সোপান হল ইন্দ্রিয় সংযত করা। মনকে নির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থাপিত করা। আর তার জন্য বেশ কিছু আচার অনুশঠান অনেকেই পালন করেন।
মনকে সংযত করা তো সহজ কাজ নয়। সে স্বভাব চঞ্চল। সেই সমস্যা সকলেরই। স্বয়ং অর্জুনও একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। শ্রী কৃষ্ণ যখন তাঁকে আত্মাতত্ত্বের উপদেশ দিচ্ছেন, তখন তিনি বললেন,
যোবয়ং যোগস্ত্বয়া প্রোক্তঃ সাম্যেন মধুসূদন
এতস্যাহং ন পশ্যামি চঞ্চলত্বাৎ স্থিতিং স্থিরাম্।
অর্থাৎ, হে মধুসূদন, তুমি তো বলছ মনকে স্থির করতে। কিন্তু মন যেরকম চঞ্চল তাতে সমত্বভাব স্থায়ী হবে বলে তো বিশ্বাস হয় না।
আরও শুনুন – Spiritual: শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কোথা থেকে? এর অর্থ কী?
অর্জুনের ভয়, মনকে আবদ্ধ রাখা যাবে না। যেমন বায়ুকে আবদ্ধ রাখা যায় না। তাই তিনি বলছেন,
চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্।
তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্কুরম্।। (২২৯ পাতা)
অর্থাৎ, ইন্দ্রিয়রা মস্ত বলশালী। যেন লোহার মতোই অনমনীয়। সেইহেতু আমি মনে করি, হে কৃষ্ণ, মনকে আবদ্ধ করে রাখা প্রায় দুঃসাধ্য এক কাজ।
সে কথা মেনে নিলেন স্বয়ং কৃষ্ণ। মনকে স্থির করা যে শক্ত কাজ, সে কথা জানাতে দ্বিধা করলেন না। বললেন,
অসংশয় মহাবাহ্যে মনো দুর্নিগ্রহং চলম্
অর্থাৎ, হে মহাবাহু অর্জুন, মন যে চঞ্চল এবং তাঁকে নিরোধ করা যে কষ্টসাধ্য এ নিয়ে কোনও সংশয়ই নেই।
কিন্তু সেই সঙ্গে জুড়ে দিলেন আরও একটি কথা, বললেন,
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে।।
হে কৌন্তেয়, অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভূত করা যায়।
এইখানে আমরা আবার সেই গোড়ার কথায় ফিরে গেলাম। এই চঞ্চল মনকে বশীভূত করতে গেলে কিছু বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান দরকার হয়ে পড়ে। তার কিছু ধরন-ধারণ আছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। কেউ কেউ শুধুমাত্র সেই আচারের ধরনটিকেই সবটুকু বলে মনে করেন। তখন মন বশীভূত হওয়া দূরের কথা, সমস্ত মন গিয়ে পড়ে থাকে আচার ঠিক করে পালন করা হচ্ছে কিনা সেই তদারকিতেই। আসল পথ গেল ঘুলিয়ে। সবটাই হয়ে উঠল আচারসর্বস্ব।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।