কৌতুক শিল্পী। তবে মঞ্চের নয়, সিনেমায়। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে ছবি মনে আসবে তা হয়তো কোনও পুরুষের। কারণ ভারতীয় সিনেমায় পুরুষ কমেডিয়ানের সংখ্যাই বেশি। এই ধারণাই বদলেছিলেন উমা। বলিউডের প্রথম মহিলা কমেডিয়ান। জানেন তাঁর পরিচয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বলিউডে কৌতুক অভিনেতার সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তবে মহিলা কমেডিয়ান একজনও রয়েছেন কি? উত্তরটা হয়তো অনেক ভেবেচিন্তে দিতে হবে। এদিকে পুরুষ কমেডিয়ানের নাম বললেই এক কথায় অনেকে বলে দেবেন, জনি লিভার, রাজপাল যাদব কিংবা বোমান ইরানির মতো শিল্পীর কথা। নিঃসন্দেহে এঁরা গুণীজন, সন্দেহ নেই তাতে এতটুকু, তাই বলে বলিউডে কোনও মহিলা কৌতুকশিল্পী নেই?
:আরও শুনুন:
সিনেমার পর্দায় ‘প্রথম চুম্বন’, ট্যাবু ভেঙে পথ দেখিয়েছিলেন দেবিকা রানি
অবশ্যই আছে। যার শুরুটা হয়েছিল উমার হাত ধরে। পুরো নাম উমা দেবী খাতরি। সুগায়িকা, সেইসঙ্গে তুখোড় অভিনেত্রী। তবে কৌতুকশিল্পী হিসেবেই সকলের মন জয় করেছিলেন উমা। ছোটবেলায় পরিবারকে হারিয়ে অনাথের মতো বড় হয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুটাও একেবারেই সহজ ছিল না। তখনকার দিনে মেয়ে হয়ে অভিনয় জগতে পা রাখাই ছিল বেশ কঠিন বিষয়। সেখানে স্রেফ অভিনয় নয়, কৌতুকশিল্পী হতে চেয়েছিলেন উমা। কাজেই সহ্য করতে হয়েছে অনেক কিছু। সেসব পেরিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন উমা। তাঁর ঝুলিতে ২০০-রও বেসি সিনেমা। এর মধ্যে তাঁর গলায় গান রয়েছে অন্তত ৪৫টি সিনেমায়। তবে উমা নামে সিনে দুনিয়ায় ইনি পরিচিত নন। সবাই তাঁকে চেনেন, টুনটুন নামে।
:আরও শুনুন:
নায়িকা ছিলেন মধুবালা, দেশের প্রথম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সিনেমা কোনটি জানেন?
এমনিতে কৌতুকশিল্পী মানেই যে মজার নাম হতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। তবে সে যুগে এমন চল ছিল। তাই উমার নাম হয়ে যায় টুনটুন, আর তাতেই পরিচিতি মেলে। স্বাধীনতার আগে থেকেই সিনেদুনিয়ায় তাঁর যাতায়াত শুরু। তবে বিশেষভাবে পরিচিত হন ১৯৪৭-এই। ‘দর্দ’ সিনেমায় তাঁর গলায় ‘আফসানা লিখ রহি…’ গানটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। দিলীপ কুমারের সঙ্গে বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করেছেন। একটানা ৫০ বছর তাঁরই একছত্র আধিপত্য ছিল বলিউডে। অন্তত মহিলা কৌতুক শিল্পী হিসেবে। তবে চেহারা নিয়ে বরাবর কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে উমা দেবীকে। অতিরিক্ত ওজনের ফলে রোগ বাসা বেঁধেছিল। তার জেরে শেষজীবনটা আবারও কষ্টের মধ্যে দিয়েই কাটাতেই হয় উমা দেবীকে। আসলে, সিনেমায় যতই গুরুত্ব থাক, নায়ক-নায়িকা ছাড়া আর কাউকে সচরাচর কেউ মনে রাখে না। অন্তত কাজ শেষ হলে তো নাই-ই। উমা দেবীর ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। পরিচিত মুখ হয়েও শেষজীবনে কারও সঙ্গ পাননি সেইভাবে। তবু সিনেমায় তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। একের পর এক সিনেমায় তাঁর তুখোড় অভিনয় নিয়ে চর্চা হতেই পারে। আর সেভাবেই আজীবন থেকে যেতে পারেন উমা।