ধর্মের টানে কুম্ভে হাজির কোটি কোটি ভক্ত। প্রকাশ্যেই তাঁরা স্নান সারছেন। সেই ভিড়ে রয়েছেন মহিলারাও। তাঁরাও স্নান বা পোশাক বদল করছেন প্রকাশ্যেই। আর সেই ঘটনার ভিডিও-ই রমরমিয়ে বিকোচ্ছে নেটদুনিয়ায়। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
১৪৪ বছর পর বসেছে মহাকুম্ভের আসর। সরকার সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনই দাবি করেছে। আর তাতেই অনেকের মনে এই ভাবনা এসেছে, যে কুম্ভস্নান না করলে জীবন বৃথা! তাই কেউ মোটা টাকা খরচ করে বিশেষ ব্যবস্থা সহ, কেউ আবার কষ্ট করে একা একা কুম্ভে পৌঁছেছেন। স্নান সেরেছেন। সেই ছবি বা ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করেছেন। কিন্তু পুন্যলাভের ঠেলায় নিজের গোপনীয়তা বিক্রি হয়ে যায়নি তো?
এমন প্রশ্নের কারণ একটাই, নেটদুনিয়ায় রমরমিয়ে বিকোচ্ছে কুম্ভস্নানের ভিডিও। মূলত মহিলাদের। শুধু স্নান নয়, মহিলাদের প্রকাশ্যে পোশাক বদলের ছবিও গোপনে তুলে নিচ্ছেন কেউ কেউ। তৈরি হচ্ছে ভিডিও। তারপর সেই ভিডিও বা ছবি মোটা টাকায় বিক্রি চলছে। অনেকটা এমএমএস ধাঁচের এইসব ভিডিও মূলত বিকোচ্ছে টেলিগ্রামে। এমনিতে এই অ্যাপ বিভিন্ন গোপন কাজের শরীক। সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন অনেক কিছুই এখানে বিনামূল্যে মেলে। বই থেকে শুরু করে নতুন সিনেমা, সব কিছুরই পাইরেটেড ভার্সন এখানে উপলব্ধ। তাই এই অ্যাপকেই বেছে নেওয়া হয়েছে কুম্ভস্নানের ভিডিও বিক্রির আদর্শ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। টাকার বিনিময়ে সেখান থেকেই মিলবে ভিডিও। আপাতভাবে সাধারণ মনে হলেও, যারা এই ধরনের ভিডিও কিনছেন তাদের কাছে বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এরা সকলেই মহিলাদের পোশাক বদলকে অন্য নজরে দেখছেন, যা অবশ্যই সেই মহিলার জন্য অপমানজনক, একইসঙ্গে তাঁর গোপনীয়তা লঙ্ঘন। জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের তদন্তে বিষয়টা সামনে এসেছে। আর তাতেই হইচই শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদনেও একইভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, কুম্ভমেলায় ধর্মের মোহে নিজেদের গোপনীয়তা বিকিয়ে আসছেন না তো? সেইসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে তথ্য প্রমাণ। কীভাবে কত টাকার বিনিময়ে মহিলাদের স্নানের ভিডিও বিকোচ্ছে সেইসব প্রকাশ্যে এনেছে ওই সংবাদ মাধ্যম। তাদের দাবি, লোকচক্ষুর আড়ালে চলতে থাকা এই ঘটনা একেবারেই অনৈতিক। এবং তা অস্বীকারের উপায় নেই, একথা মেনে নিচ্ছেন নেটিজেনরাই। সবটাই যে গোপনভাবে হচ্ছে তা নয়। বেশ কিছু জনপ্রিয় সোশাল মাধ্যম, যেখানে কোনও কিছুই গোপনে চালানো সম্ভব নয়, সেখানেও এমন ভিডিওর ছড়াছড়ি। ভুয়ো নাম, ভুয়ো পরিচয়ের অ্যাকাউন্ট, সেখানে স্রেফ মহিলাদের স্নানের ভিডিও। কে তুলেছে, কখন তুলেছে, কেউ জানে না। অথচ এই ঘটনা যে সত্যি তা ওই চ্যানেলে ঢুকলে বোঝা যাবে। তাতে বিভিন্ন মন্তব্য, তির্যক কটাক্ষ, সবই রয়েছে। আর তাতেই সামগ্রিকভাবে বিষয়টাকে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
যদিও এই কুম্ভে গিয়েই, কয়েকজন মহিলা দাবি করেছিলেন যে, মেল গেজের কাঁটা তাঁদের যন্ত্রণা দিচ্ছে না। তবে তা বোধহয় কেবল তাঁদের জন্যই সত্য। যেভাবে কুম্ভের স্নানরতা মহিলাদের ছবি-ভিডিও বিকোচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়, তাতে বলাই যায়, বিকৃতমনস্কতা থেকে তাঁদের রেহাই নেই।