জড়িয়ে ধরা। বেশিক্ষণ না, কয়েক মিনিট যথেষ্ট। তাতেই নাকি কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। মন খারাপ সেরে যায়। ভালোবাসা বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের দাবি, একটানা প্রতিদিন ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরলে, কঠিন রোগও সেরে যায়। ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ সিনেমার কথা মনে আছে? যেখানে অসুখ-বিসুখ থেকে মনখারাপ, সব কিছুই নিমেষে সারিয়ে ফেলতে পারতেন মুন্নাভাই তাঁর ‘জাদু কি ঝাপ্পি’র গুণে। শুধু সিনেমার কথা কেন বলি, বাস্তবেও এমনটা হয় বইকি! মনখারাপ হোক বা শরীর খারাপ, প্রিয় মানুষ কিংবা কাছের বন্ধুবান্ধবের থেকে পাওয়া আলিঙ্গন অব্যর্থ ওষুধের মতোই কাজ করে। আর এক্ষেত্রে খোদ চিকিৎসকরাই সেই সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময়ে আলিঙ্গনের রেওয়াজ রয়েছে বহু দেশেই। প্রেমিক-প্রেমিকা তো বটেই, বন্ধুরাও ভালোবাসা বোঝাতে জড়িয়ে ধরেন একে অন্যকে। তাতে যৌনতার ইঙ্গিত থাকতেই হবে, এমনটা নয়। বরং ভালোবেসে জড়িয়ে ধরায় যে সমপর্ন রয়েছে তা অন্য কোনওভাবে বোঝানো কঠিন। তাই বিমানবন্দর হোক বা তাড়াহুড়োয় অফিস বেরোনো, একবারের জন্য কাছের মানুষকে জড়িয়ে ধরতে ভোলেন না অনেকেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, শরীরে এর প্রভাব পড়তে পারে মারাত্মক ভাবে। আসলে, খুশি হলে আমাদের শরীরে যে বিশেষ হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়, এখানেও তারই কামাল। তবে জড়িয়ে ধরার ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও একটু গভীর। কারণ এখানে স্রেফ ছুঁয়ে যাওয়া হয় না, বেশ খানিকক্ষণ নিজের শরীরের উষ্ণতা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আর তাতেই মনের আরাম মেলে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন গবেষণায় এই প্রমান পেয়েছেন যে, জড়িয়ে ধরার পর মানব মস্তিষ্কে বিশেষ পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। প্রচণ্ড অস্থির মুহূর্তে কেউ যদি সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরেন, তাহলে মন শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কমতে পারে রক্তচাপ। সুরাহা হতে পারে স্ট্রেস, মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যার। শুধু বড়রা কেন, ছোটরাও ভয় পেলে কাউকে জড়িয়ে ধরতে চায়। শিশু শরীর নিজে থেকেই সেই উষ্ণতা বা আশ্রয় খুঁজে পেতে চায় যা তার মনকে শান্ত করবে। বাস্তবে হয়ও তাই। সুতরাং, জড়িয়ে ধরা যে স্রেফ প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ বা তাঁরাই উপকৃত হবেন, এমনটা একেবারেই বলা যায় না। লিঙ্গ নির্বিশেষে, এই ওষুধে কাজ হতে পারে সবার।
তবে হ্যাঁ, জড়িয়ে ধরায় তাড়াহুড়ো করা চলবে না। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আলিঙ্গন করতে হবে। অবশ্যই এমন কারও সঙ্গে, যাকে ভরসা করা যায়। বা যাকে জড়িয়ে ধরলে মনের আরাম হবে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। জোর করে জড়িয়ে ধরতে চাইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কেউ চাইছেন না বুঝেও জড়িয়ে ধরতে চাওয়া একেবারেই উচিৎ নয়। ভালোবাসার সম্পর্কে অবশ্য এই শর্ত খাটে না। এখানে জড়িয়ে ধরা মানে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা জাহির করা। অনেকেই বলেন, নিয়মিত জড়িয়ে ধরলে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। আর তাই হয়তো ভালোবাসার সপ্তাহে আস্ত একটা দিন রয়েছে আলিঙ্গনের। যদিও বিজ্ঞান যা বলছে, তাতে বছরের প্রত্যেকটা দিনই যদি হাগ ডে উদযাপন করা যায়, তাতে লাভ বই ক্ষতি হবে না।