স্রেফ শাহী স্নান নয়। কুম্ভমেলায় রয়েছে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান। মেলা উপলক্ষ্যে তো বটেই, বছরভর সেইসব জায়গায় বেশ ভিড় থাকে। তালিকায় মূলত রয়েছে বিভিন্ন মন্দির। কী বিশেষত্ব সেইসব মন্দিরের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
১৪৪ বছর পর বসেছে মহাকুম্ভের আসর। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে মেলাইয় হাজির হচ্ছেন ভক্তরা। উদ্দেশ্য পুণ্যস্নান। বিশেষ মুহূর্তে করলে তা হয়ে যাবে শাহী স্নান। শাস্ত্রমতে এর মাহাত্ম্য অপার। এজন্মের যাবতীয় পাপ ধুয়ে যাবে গঙ্গার জলে। একইসঙ্গে পরজন্মের জন্য সঞ্চয় হবে পুণ্য। তবে মেলার সময় ছাড়াও কুম্ভচত্বরে অর্থাৎ প্রয়াগে বেশ ভিড় হয়। নেপথ্যে রয়েছে সেখানকার কিছু মন্দির।
তালিকার প্রথমেই রয়েছে সংকটমোচন হনুমান মন্দির। দেশের প্রায় সব তীর্থস্থানেই একটি হনুমান মন্দির চোখে পড়বে। তবে প্রয়াগের মন্দিরটির বিশেষত্ব হনুমানের বিগ্রহে। আসলে, মূর্তিটি শোয়ানো। এবং আকারে এতটাই বড় যে মূর্তির মাথার দিকে দাঁড়িয়ে স্পষ্টভাবে পা দেখা যায় না। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির লেটা হুয়া হনুমান নামে খ্যাত। বলা হয়, এই মন্দির নাকি মহাভারতের আমলে তৈরি। গঙ্গার এতটাই কাছে মন্দিরটি অবস্থিত যে, জোয়ারের সময় অনায়াসে ভিতরে জল ঢুকে যায়। যেন স্বয়ং গঙ্গা এসে হনুমানকে স্নান করিয়ে যাচ্ছেন। কুম্ভের সময় এই মন্দির ঢোকার জন্যও লাইন দিচ্ছেন ভক্তরা। তবে বছরভর যে একইরকম ভিড় থাকে তা নয়।
তালিকায় পরের মন্দিরটি বেনীমাধব মন্দির। বলা হয়, এই মন্দিরের আরাধ্য প্রয়াগের রক্ষাকর্তা। স্বয়ং ব্রহ্মা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এমনটাও জনশ্রুতি রয়েছে। তবে এই মন্দির গঙ্গাবক্ষে তথা কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত নয়। তার থেকে কিছুটা দূরে দরগঞ্জ নামক জায়গায় এই মন্দির রয়েছে। এরপরই বলতে হয় পাতালপুরীর মন্দিরের কথা। এখানে শিব-পার্বতীর অর্ধনারীশ্বর মূর্তি রয়েছে। পুরাণে দেবাদিদেবের এই রূপ বিশেষ সমাদৃত। তাই এই মন্দিরের মাহাত্ম্যও কম নয়। রয়েছে নাগবাসুকির মন্দিরও। সর্পকূলের অধিশ্বর বাসুকি দেবতা জ্ঞানেই পূজিত হন। তাঁর মূর্তি অধিষ্ঠিত এই মন্দিরে। ভক্তদের বিশ্বাস, প্রয়াগরাজে এসে কেউ যদি এই মন্দিরে দর্শন না করা হয়, তাহলে কুম্ভযাত্রা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এছাড়া শিবমন্দির চোখে পড়ে শহরের প্রায় সব জায়গাতেই। তার মধ্যে কিছু মন্দির বেশ প্রাচীন। প্রয়াগে আরও দুই দৈবস্থান প্রসিদ্ধ। কথা বলছি, সরস্বতি কূপ ও অক্ষয়বট মন্দির সম্পর্কে। এখানে কোনও দেবমূর্তি না থাকলেও, রয়েছে একটি কূপ ও বটগাছ। প্রচলিত বিশ্বাস, স্বয়ং রাম এবং সীতা এই বটগাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই ভক্তিভরে এখানে মাথা ঠেকিয়ে যান অনেকেই। তবে কুম্ভচত্বর বহুদিন থেকে ঘোরার মতো জায়গা নয়। দু-একদিন যথেষ্ট সম্পূর্ণ প্রয়াগ ঘুরে দেখার জন্য। বরং সেখান থেকে অযোধ্যার রামমন্দির বা কাশী বিশ্বনাথ ধাম ঘুরে আসা যেতে পারে। কুম্ভের আবহে, অনেকে তাই করছেন। যদিও এইসময় যানজটে নাকাল হচ্ছেন ভক্তরা। তবে কুম্ভ শেষ হলে প্রয়াগ ভ্রমণ করা যেতেই পারে।