সম্প্রতি বাংলা হোক কি হিন্দি-ইংরেজি– রি-রিলিজের ঝড় উঠেছে। এদিকে সিনেমা নতুন নয়। তবুও সিনেমা হলে দর্শকদের ভিড়, হাত তালি, সিটি, হাসির আওয়াজের কোনও নেই কোনও কমতি। কেন সিনেমা পুরনো হওয়া সত্ত্বেও হলে হচ্ছে এতো ভিড়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বাংলা হোক কি হিন্দি-ইংরেজি– রি-রিলিজের ঝড় উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে। যা সুপারহিট, যা ক্লাসিক, যা গেঁথে গিয়েছে দর্শকদের মনে, সংলাপ ছড়িয়ে গিয়েছে প্রেমপত্রে কিংবা পাড়া-বেপাড়ার হিংসায়– সেইসব ছবি আবার ঘাই মেরেছে বড়পর্দায়। টিভিতে এখনও পুরনো, রেট্রো সিনেমা দেখলে চোখের পলক যেন পড়তেই চায় না দর্শকদের। ‘পথের পাঁচালী’র অপু-দুর্গার দৃশ্যখানা! তুলসী চক্কোতির ‘মাসিমা মালপো খামু’। ‘যব উই মেট’-এ করিনা কাপুরের ‘ম্যায় আপনি ফেভারিট হু’ বা ‘কাল হো না হো’ সিনেমার সেই বিখ্যাত ‘হাসো, জিও, খুশ রাহো, ক্যায়া পাতা কাল হো না হো’– এই সমস্ত সংলাপই দর্শকদের মুখস্থ করে হয়নি কোনও দিন। তা রয়ে গিয়েছে জীবনে, যাপনে। দু’হাত ছড়ানো শাহরুখ খান কে না হতে চেয়েছে মনে মনে, কে-ই বা তার নিজের ‘ফেভারিট’ নয়? আজকের গ্রাম-মফসসল থেকে আসা কিশোরের চোখে অপুর কলকাতাও কি একেবারে হারিয়ে গিয়েছে নাকি? নাকি হারিয়েছে বাঙালির পুরনো আটপৌরে রসবোধময় বাংলা সিনেমার সংলাপ?
স্বীকার করে নেওয়া ভালো, যে সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে, সেখানে কেবলই সিনেমা রিলিজ হচ্ছে ওটিটি-তে। সিনেমা-সিরিজ এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতো করেই তৈরি করা হচ্ছে। সিনেমা, যা ছিল নিখাদ বড়পর্দার, তার পরিসর, উত্তেজনাও তাই। নায়কের এন্ট্রিতে দর্শকের অনর্গল শিসধ্বনি, নায়ক-নায়িকার প্রেমে যৌথ মুগ্ধবোধ, ভিলেনের মার খাওয়ার সময় খিস্তি– এই সকল মিলে সিনেমার বাইরেও ছিল সিনেমার স্বাদ।
তাই দর্শকদের আনন্দের কথা ভেবে শুধু নয়, পুরনো নস্টালজিয়ার সেই আমেজটুকুই শুধু ফিরে পেতে নয়, সিনেমার বিরাটত্বকে আরেকবার ফেরাতেই, দর্শককে হলমুখী করতেই হয়তো এই রি-রিলিজের চাল।
পুরনো সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও, টিকিট বিক্রি ও সিনেমা হলে দর্শকদের ভিড়ও দেখা যাচ্ছে সমান তালে। ফলে ব্যাপারটা ব্যাবসাসফল, সন্দেহ নেই। সিনেমা হলে দর্শকদের ভিড়, হাত তালি, সিটি, হাসির আওয়াজ শুনলে যেন মনেই হবে না এইগুলো সব পুরনো সিনেমা। বরং এখন সেই চেনা প্রিয় সিনে-মুহূর্তের জন্য যেন অপেক্ষা করে থাকা। ফিসফিস করে নায়ক-নায়িকার সঙ্গে সংলাপ বলা অন্ধকার হলে।
তবে ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। দেখা যাচ্ছে, আবার করে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলি একসময় উপযুক্ত প্রচারের অভাবে, কখনও বা সময়ের থেকে পরিণত হওয়ায়, দর্শকানুকূল্য লাভ করেনি। এখন, সেসব ছবির পুনর্মুক্তিতে বোঝা যাচ্ছে, দর্শক পাল্টেছে। সিনেমার বোধ পাল্টেছে। ফ্লপ সিনেমাও কামব্যাক করতে পারছে বড়পর্দায়। ফলে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে ভালোই। শুধু নব্বই বা দুই হাজার সালের শুরুর দিকে নয়, আট ও সাতের দশকের অনেক সিনেমাই বর্তমানে বিভিন্ন সিনেমাহলে পুনরায় মুক্তি পাচ্ছে। পুরনো দর্শকেরা তো বটেই, জেন জেড জেনারেশানের ছেলেমেয়েদের ভিড়ও কিছু কম নয়। মোবাইল, ট্যাবে আসক্ত এই দুঃসময়ে সিনেমা হলে যৌথ শিস, আনন্দ, অট্টহাসি কিংবা কান্নার খানিক পরিসর অন্তত রয়েছে। তাই মানতেই হবে, সুপারহিট শুধু সিনেমা নয়, রি-রিলিজের এই আইডিয়াখানাও।