দেশের অন্যতম অসামরিক সম্মান। সাধারণ কেউ তা পাওয়ার যোগ্য নন। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনের সুবাদে মেলে পুরস্কার। বাংলা থেকেও বহু গুণীজন পদ্মসম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তবে সকলেই তা গ্রহণ করেছেন এমন নয়। পদ্মশ্রী পেয়েও তা প্রত্যাখান করেছিলেন কারা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খুব বেশিদিনের পুরনো ঘটনা নয়। ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একইসঙ্গে পদ্ম সম্মান অস্বীকার করলেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ! চর্চায় তখন একটাই বিষয়, বাঙালির বুকের পাটা!
অবশ্য বাঙালির বুকের পাটা ঠিক কতটা জোরালো, তা বহু আগেই প্রমাণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি অবলীলায় ত্যাগ করেছিলে বিশ্বকবি। তারই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সরকারের দেওয়া পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন বহু বঙ্গসন্তান। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার নয়, কেন্দ্রের দেওয়া পুরস্কার নিতেই তাঁরা অস্বীকার করেন। যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখিয়েই এমনটা করেছেন এই সমস্ত কৃতীরা। যা অস্বীকারের উপায় ছিল না কারও কাছেই। প্রথমেই বলতে হয় প্রবাদপ্রতীম নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ির কথা। বাংলা থিয়েটার জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সেই সুবাদে ১৯৫৯ সালে তাঁকে পদ্ম পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন নেহেরু সরকার। কিন্তু এই পুরস্কার নেননি নাট্যাচার্য। নেপথ্যের কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন থিয়েটারের প্রতি কেন্দ্রের অবহেলার বিষয়টিকে। তারই প্রতিবাদ হিসেবে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন শিশিরকুমার। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় সম্মান আদতে স্তাবকের দল গঠনের চেষ্টা মাত্র। সেই দলে তিনি নিজের নাম লেখাবেন না। নাটকের জগতের আরও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র একাধিকবার পদ্মসম্মান নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বাদল সরকার। নাটকের ইতিহাসে তাঁর অবদান ঠিক কতখানি তা আলাদা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে রাষ্ট্রের দেওয়া সম্মান তিনি নিতে চাননি। নেপথ্যে যুক্তি ছিল, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির পুরস্কারের মধ্যে দিয়েই জীবনের সেরা সম্মান তিনি পেয়ে গিয়েছেন। আলাদা করে আর কিছু প্রয়োজন নেই।
:আরও শুনুন:
২৬/১১-র অন্যতম চক্রী হুসেনের ভারতে প্রত্যর্পণে সায় আমেরিকার, কী ভূমিকা ছিল মুম্বই হামলায়?
বাংলা থেকে পদ্মপুরস্কার ফিরিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও। ১৯৮৭ সালে তাঁর নাম ছিল পদ্ম সম্মান প্রাপকদের তালিকায়। কিন্তু পুরস্কার নেননি কিংবদন্তী। যদিও কেন এমন পদক্ষেপ, সেই কারণ সম্পর্কেও সঠিক বাখ্যা দেননি প্রবাদপ্রতীম শিল্পী। তালিকায় অভিনেতারাও রয়েছেন। বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পদ্মশ্রীর প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দেন। এছাড়া নয়ের দশকে আরও এক বাঙালি পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কথা বলছি সাংবাদিক নিখিল চক্রবর্তী সম্পর্কে। নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য তাঁকে পদ্ম সম্মানে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তবে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সাংবাদিকের ওপর রাষ্ট্রের বদান্যতার বোঝা থাকা উচিত নয়! তবে এবছর বাংলা থেকে অনেকেই পদ্ম সম্মানে ভূষিত হতে চলেছেন। সঙ্গীত শিল্পী অরিজিৎ সিং, নৃত্যশিল্পী মমতা শংকর, সাহিত্যিক নগেন্দ্রনাথ রায়-সহ বাংলার মোট ৯ জন এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। এও নিঃসন্দেহে বাংলার তথা বাঙালির কাছে গর্বের বিষয়।