কুম্ভমেলা স্রেফ হিন্দুদের, কোনও অহিন্দু এই মেলায় যেন ব্যবসা না করে। এমনটাই দাবি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের। এই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু বাস্তবে কি তেমনটাই হচ্ছে? একেবারেই না, বরং ইউনুস-আফসারদের ছাড়া কুম্ভমেলা অচল! ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুম্ভ নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে গত বছরের শেষদিকে। নতুন বছরের শুরুতে তা তুঙ্গে পৌঁছেছে। অবশ্য এমনটা হওয়াই যে স্বাভাবিক, তা বলাই বাহুল্য। স্রেফ দেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই মেলা উপলক্ষে ভারতে হাজির হয়েছেন। ভিড় জমিয়েছেন কুম্ভে। তাই পুণ্যলাভের পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের কাছেও কুম্ভ যেন স্বর্গ। আর সেখানেই যত বিতর্ক।
হিন্দুত্ববাদী এবং মেলায় আগত অধিকাংশ সাধুর দাবি, কুম্ভে যেন অহিন্দু কেউ ব্যবসা করতে না পারে। সরকারি কোনও নির্দেশ না এলেও ধরে নেওয়া যাক, এবারের কুম্ভে এমন নিয়ম মানতে বাধ্য হবেন অহিন্দুরা। কিন্তু ব্যবসা মানেই যে স্রেফ দোকান দেওয়া তা নয়। বরং কুম্ভ হল সেই মিলনক্ষেত্র যা একইসঙ্গে নানা ধরনের নতুন পেশার জন্ম দেয়। আর সেখানে মিলেমিশে এক হন হিন্দু-মুসলিম সকলেই। কেউ কেউ সরাসরি আখড়ার কাজে যুক্ত, অথচ ধর্মে মুসলমান।
প্রথমেই বলতে হয় শোভাযাত্রার কথা। কুম্ভমেলায় এই শোভাযাত্রা দেখতে পাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। তবে এখানে মূল আকর্ষণ কোনও দেবদেবীর মূর্তি নয়, বরং বিশাল জটাধারী সাধুর দল। কেউ ঘোড়ায় চড়ে, কেউ উটে, কেউ হাতি, কেউ আবার সুসজ্জিত রথে চড়ে মেলায় আসেন। সাজসজ্জার বহর দেখার মতো। শোভাযাত্রা ঘিরে রাখেন ভক্তরা। রথে আসীন সাধু আশীর্বাদ করেন সকলকে। এই শোভাযত্রার সঙ্গে থাকে বাজনার দলও। থাকে সানাই। আর সেই দায়িত্ব মহম্মদ আফসারের। পেশাগত সানাইবাদক এই ব্যক্তি মুসলিম হলেও স্বচ্ছন্দে কুম্ভে ঘোরার অনুমতি পেয়েছেন। এমনকি সাধুদের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি থাকছেন, বাজাচ্ছেন, রোজগার করছেন, আপত্তি তুলছে না কেউ। এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে মোটা টাকা রোজগার করেন অনেকেই। যারা উট, হাতি কিংবা ঘোড়ার দায়িত্ব থাকেন তাঁরা এই কুম্ভের সময় প্রায় ৩ গুণ রোজগার করেন। স্রেফ কাঠের খেলনা বিক্রি করেও ভালো রোজগার হচ্ছে অনেকের। এঁদের কেউ কেউ ধর্মে মুসলিম, কেউ হিন্দু। সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই দোকানিদের। রোজগার হলেই হল। প্রত্যেকেরই দাবি, ভগবানের দয়ায় তা ভালোই হচ্ছে। সরকারিভাবে কুম্ভমেলা শুরু জানুয়ারির ১৩ থেকে, কিন্তু তার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রয়াগে ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা। কাজেই ছোটখাটো দোকানিদের লক্ষ্মীলাভ মন্দ হচ্ছে না।
এখানেই শেষ নয়। রোজগারের আশায় কুম্ভে এসেছেন মহম্মদ ইউনুসও। তবে ইনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নন। এ দেশের এক চা বিক্রেতা। মেলায় ঘুরে ঘুরে সকলের চা-তেষ্টা মেটাচ্ছেন এই ইউনুস। তাতে পকেট ভরছে নিমেষে। এঁদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করতে আপত্তি নেই অন্য ধর্মের দোকানিদের। বরং কেউ কারও পরিচয় নিয়ে তেমন মাথাই ঘামাচ্ছেন না। সকলেরই একমাত্র উদ্দেশ্য রোজগার করা। সেটা হলেই হল। বরং এঁরা একসঙ্গে আছেন বলেই যেন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হচ্ছে মহাকুম্ভের আয়োজন। আগামীতে কী হবে, সে সম্পর্কে এঁদের ধারণা নেই। কেউ সেসব ভাবতেও চান না। যেটুকু পাচ্ছেন সেটা সঞ্চয় করে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে পারাটাই এঁদের কাছে সবকিছু। তাই ধর্মের রাজনীতি ভুলে কুম্ভমেলায় এক হয়ে থাকছেন আফসার-ইউনুস-যাদবরা।