গোটা গ্রামের কেউ ঘুড়ি ওড়ায় না। বিশেষ করে মকর সংক্রান্তিতে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। যেদিন গোটা দেশের মানুষ ঘুড়ি উৎসবে সামিল হন, সেই সময় এই গ্রামের আকাশ থাকে শূণ্য। নেপথ্যে পরিযায়ী পাখির দল। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আকাশের কোনও কাঁটাতার নেই। ভিনদেশে উড়ে যেতে কেউ মানা করে না। তাই প্রতিবছর বাধাহীন ভাবে ভারতে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখিরা। মূলত শীতকালে। উদ্দেশ্য প্রজনন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এইসব অজানা অচেনা অতিথিদের দেখতে ভিড় জমান অনেকে। তবে স্রেফ দেখা নয়, পরিযায়ী পাখিদের শান্তিতে যেন খামতি না হয়, সেই ব্যবস্থাও করেন কেউ কেউ।
গুজরাটের লুনা গ্রামের কথাই ধরা যাক। শহর থেকে বেশ খানিকটা ভিতরে এই গ্রাম সেইভাবে উন্নত হয়। চারদিকে গাছ-গাছালীদের ভরা এই গ্রামে জলাশয় রয়েছে বেশ কয়েকটা। মোটের উপর শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। তাই এই গ্রাম প্রতি শীতে পছন্দের ঠিকানা হয় পরিযায়ী পাখিদের। সংখ্যায় অন্তত শ-তিনেক! এদের এতটুকু যাতে সমস্যা না হয়, তাই শীতের সময় বিশেষ সতর্ক থাকে গোটা গ্রাম। এমনিতেই গ্রামের পথ-ঘাটে গাড়ির হর্ন বাজে না, বাড়িতে জোরে মাইক বাজানোর সম্ভাবনাও নেই, তাই শব্দে সমস্যা হবে এমন নয়। কিন্তু ঘুড়ি! মকর সংক্রান্তি এলেই তো আকাশজুড়ে উড়বে ঘুড়ি। এক্ষেত্রে শহরের থেকে গ্রামের পাল্লা ভারী। এতদিন ব্যতিক্রম ছিল না লুনা গ্রামও। কিন্তু আকাশে ঘুড়ি উড়বে পরিযায়ী পাখিরা উড়বে কোথায়? দুর্ঘটনা কম হত না। ঘুড়ির ধারালো সুতোয় চোট পেত ভিনদেশ থেকে উড়ে আসা পাখির দল। সেসব দেখেই গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেয়, এবার থেকে ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ। অন্তত পাখির দল যতদিন গ্রামে থাকবে ততদিন একটাও ঘুড়ি ওড়ানো হবে না।
সেই নির্দেশ ভালোবেসেই মেনে নেয় গ্রামের সকলে। ঘুড়ির বদলে আকাশ ঢাকে পাখিদের দল। সেসব দেখতে আরও অনেকে হাজির হন গ্রামে। ভিড় জমান ফটোগ্রাফাররাও। শর্ত একটাই, পাখিদের বিরক্ত করা যাবে না। প্রায় ১০ বছর ধরে এই নিয়ম মেনে আসছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। খুব ইচ্ছা হলে ভরদুপুরে ঘুড়ি ওড়ান কেউ কেউ। কারণ, এই সময়টায় ওই পাখির দল বাসায় বিশ্রাম নেয়। তাই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণের এক গ্রামেও এই পরিযায়ী পাখিদের কথা ভেবে আতশবাজী ফাটানো বন্ধ হয়েছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে গুজুরাটের লুনা গ্রামেরও। ধরনটা আলাদা, তবে উদ্দেশ্য একই।