বছর শেষ হতে চলেছে। নতুন বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে পার্টি, হইহুল্লোড়, গল্প-গুজবে মেতে প্রায় সকলেই। এই এত আনন্দের মুহূর্তে কানে হেড ফোন আর তাতে সমানে চলছে স্যাড সং! কিন্তু এই সব দুঃখের গানের প্রভাব নতুন বছরে পড়বে না তো আপনার জীবনে?
বছর শেষ হতে চলেছে। নতুন বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে পার্টি, হইহুল্লোড়, গল্প-গুজবে মেতে প্রায় সকলেই। এই এত আনন্দের মুহূর্তে কানে হেড ফোন আর তাতে সমানে চলছে স্যাড সং! কিন্তু এই সব দুঃখের গানের প্রভাব নতুন বছরে পড়বে না তো আপনার জীবনে? তাহলে একটু খতিয়ে দেখা যাক, স্যাড সং বা দুঃখের গান আমাদের মনে ঠিক কী ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
সঙ্গীত, সুরের ব্যাকরণ পেরিয়ে আসলে এক অন্যরকম অনুভব। যা জীবনের হারিয়ে যাওয়া অনেক স্মৃতিই ফিরিয়ে আনতে পারে। সেই স্মৃতি তখন ভেসে ওঠে চোখের সামনে। পার্টি বা আনন্দের গান শুনলে আমাদের শরীর ও মন যেমন ভিতর থেকে তরতাজা হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনই, বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুঃখের গান শুনলে মনে হবে সেই গান স্পর্শ করে মনের গহিন প্রদেশ। অনেকেরই তো এরকম গান শুনলে চোখ জলে ভরে যায়। আসলে সঙ্গীতের এই ক্ষমতা আছে। তা আমাদের অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। চেনা বাস্তব থেকেই আমাদের নিয়ে যেতে পারে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে। আর তখন সেই দূর কোনও মুলূকেই যেন আমরা থাকি, থাকতে চাই। বাস্তবে নয়, তবে মনে মনে হারিয়ে যেতে তো মানা নেই। সঙ্গীত সেই উড়ান সম্ভব করে তোলে।
এই যেমন ধরুন, সকালে হাতে কফি নিয়ে জানলার ধারে বসে আছেন। ফোনে টেক্সটে চলছে বন্ধুর সঙ্গে নানা কিসিমের কথপোকথন। এমন সময় কানে হেডফোন, আর আপনি সমানে শুনছেন কোনও দুঃখের গান। তবে এমনিই গান শুনতে ভালোবাসেন বলে যে শুধু গান শুনে যাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। আপনি দুঃখের গান শুনে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে, আসলে পৌঁছে যেতে চাইছেন নাম-না-জানা দুঃখের দেশে। কখনও কোনও দুঃখের গান শুনলে এমনটা কোনোদিন কি মনে হয়েছে? যদি মনে হয়ে থাকে, তবে তা ভুল কিছু নয়। দুঃখের গান মানুষকে যেন বিবশ করে তোলে। তা এমন এক দুঃখের ভিতর টেনে নিয়ে যায়, তা হয়তো কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে সত্যি নয়। তবে এই দুঃখের অনুভূতি আসলে একজনকে অন্যরকম আনন্দই দিতে থাকে। আর তাই সেই অনুভূতির মধ্যেই মানুষ নিজেকে আটকে রাখতে চান।
আর এই অনুভবের দরুনই, অন্যান্য আনন্দের ভিড়ের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে আলাদা করে রাখতে চান। স্যাড সং জীবনের না পূরণ হওয়া ইচ্ছেগুলোকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। জীবনের খামতি, আপশোস সবকিছু নিয়েই মানুষ সারাদিন মশগুল হয়ে থাকতে চায়।
যদিও গানের নিজস্ব ভাষা আছে। আছে আলাদা এক সৌন্দর্য। অতএব কে কোন গান শুনবেন, কীভাবে শুনবেন, তা নিশ্চিতই ব্যক্তিমানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা বিষয়। তবে, মনকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গানের যে ভূমিকা আছে, তা তো অনস্বীকার্য। আর তাই স্ট্রেস মুক্তির উপায় হয়ে ওঠে গান। অপারেশনের সময় ডাক্তাবাবুরাও অনেক সময় গানের সাহায্য নেন। গানের সঙ্গে মনের এই যোগাযোগের দরুনই দুঃখের গান মাঝেমধ্যে বিপদ ডেকে আনতে পারে। তা আসলে আমাদের দুঃখের মধ্যে বাস করতে প্ররোচিত করে। আমাদের অন্তরের গভীরতম দুঃখবোধ জাগিয়ে তোলে। তা কি ক্ষতিকর? হয়তো সেভাবে নয়। তবে, ক্রমাগত ওই একই পরিসরে আবদ্ধ থাকা নিশ্চিতই কাজের কথা নয়। নতুন বছর মানে নতুন উদ্যমের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সেই সময় পুরনো দুঃখবোধে আটকে থাকা কি ভালো! নাহ্ পুরনো দুঃখ ভোলার কথা হচ্ছে না। এমন কিছু দুঃখ থাকে গানের ছোঁয়ায় তা ফিরে ফিরে দেখতে খারাপ লাগে না। তবে দুঃখ পেরিয়ে নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তো দস্তুর। তাই তো জীবন প্রবহমান। আর তাই নতুন বছরের শুরুতে স্যাড সং-এ কি নিজেকে ডুবিয়ে রাখবেন? সে সিদ্ধান্ত কিন্তু একান্ত আপনারই।
সুতরাং, বারে বারে দুঃখের গান শুনে নিজেকে অদৃশ্য খাঁচায় আবদ্ধ না রাখাই ভালো। পার্টি সং শুনে মনকে ভেতর থেকে তরতাজা রাখুন। সাথে সমস্ত পুরনো দুঃখ গ্লানি মিটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোই সব থেকে বেশি শ্রেয়।