ক্রিসমাস মানেই আলো! ক্রিসমাস মানেই কেক! ক্রিসমাস মানেই চার্চে ভিড়! কিন্তু জানেন কি, এই উৎসব আদৌ খ্রিস্টানদের নয়! তাহলে, এই উৎসব চালু হয়েছিল কাদের হাতে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নতুন বছরের শুরু, পুরনো বছরের শেষ, এই সময়টা বড় আনন্দের! নেপথ্যে বড়দিন। বছরের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া উৎসবের রেশ চলে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ অবধি। মূলত খ্রিস্টানদের উৎসব হিসেবে এর পরিচিতি। কিন্তু ইতিহাস বলছে অন্য কথা, এই উৎসব আদৌ খ্রিস্টানদের নয়!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। অবশ্য বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে অন্য এক জনজাতি। কথা বলছি, পাগান(Pagan)-দের সম্পর্কে। ইউরোপের এই জাতি প্রকৃতির উপাসক। এক সময় ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ এরা নতুন ফসল ফলানো শুরু হওয়ার দিন হিসেবে পালন করত। আসলে বছরের এই সময়টা দিন রাতের হিসাবে বেশ গরমিল দেখা যায়। সবথেকে বড় রাতও এই ডিসেম্বরেই। প্রকৃতির এমন অদ্ভুত সমাপতন উৎসবের আমেজে পালন করতেন এই জনজাতির মানুষজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জাতি হারিয়ে যায়। একইসঙ্গে হারিয়ে যায় তাঁদের উৎসবও। তবে ডিসেম্বরের ২৫-এর উদযাপনটা ছড়িয়ে পড়ে। তা এখন সর্বজনীন উৎসব, বিশ্বজুড়ে পালিত হওয়া বড়দিন। তবে স্রেফ এই একটা কারণে বড়দিন যে খ্রিস্টানদের উৎসব নয়, তা বলা যায় না। বরং এর সঙ্গে জুড়তে হয় যিশুর জন্মের প্রসঙ্গ।
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, ২৫ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল তাদের প্রভু, যিশুর। যিনি দুঃখে কষ্টে জর্জরিত মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছিলেন, আশার নতুন আলো। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কেবল ভালবাসলেই মানুষ কতখানি ভাল থাকতে পারে। এমন পবিত্র ভাবনার জন্ম দিতে পারেন যিনি, তাঁর জন্মের দিনটিকেই তাই বড়-দিন বলে চিহ্নিত করেন তাঁর অনুগামীরা। এই দিনটি তাঁদের কাছে বছরের সবথেকে বড় উৎসবে র দিন। যদিও, ২৫ ডিসেম্বরেই যে যিশুর জন্ম হয়েছিল, তারও কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। এক্ষেত্রেও তাই প্রচলিত রয়েছে একটি ধারণা। জানা যায়, কোনও এক সময়ে চার্চের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ তারিখটিতে গর্ভবতী হয়েছিলেন মাতা মেরি। সেই অনুযায়ী ঠিক ৯ মাস পর ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকেই যিশুর জন্মদিবস বলে মনে করা হয়। তবে এর কোনও লিখিত প্রমাণ না থাকয় অনেকেই মনে করেন, শীতের অন্য কোনও দিনে জন্ম হয়েছিল যিশুর। এমনকী, খ্রিস্টাব্দের শুরু যখন থেকে, তারও এক বছর আগে যিশুর জন্ম হয়েছিল বলে দাবি করেন কেউ কেউ। তবে প্রচলিত বিশ্বাসে যত গরমিলই থাকুক না কেন, সেই সব কিছুর উপর ভর করেই, এত বছর ধরে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে বড়দিন। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে যা ছড়িয়ে পড়েছে, গোটা পৃথিবীতেই। ধর্মের বেড়া ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে মিলনের ‘বড়দিন’ উৎসব।