মহাভারতের ইন্দ্র! তিনিই কিনা ভিক্ষা করে কাটালেন শেষ জীবন। শুধু টিভিতে অভিনয় নয়, তাঁর ঝুলিতে ৩০০ খানা ছবিও রয়েছে। ঠিক কেন এমন অবস্থা হয়েছিল তাঁর? কার কথাই বা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একসময় তাঁকে বলা হত, ‘পাঞ্জাবের অমিতাভ বচ্চন’। দেবানন্দ থেকে শাহরুখ, বলিউডের কিংবদন্তি সব অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন ইনি। তবে সবথেকে জনপ্রিয় হয়েছিলেন, ইন্দ্রের চরিত্রে অভিনয়ের পর। সেইসময় টেলিভিশনে মহাভারত ধারাবাহিকটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন সিরিয়ালের অভিনেতারাও। আর সেই সূত্রে পরিচিত হয়েছিলেন মহাভারতের ইন্দ্র, সতীশ কৌল।
মানুষের জীবনের কোনো পরিস্থিতিই, কোনো সময় স্থায়ী থাকে না। জীবনের চাকা কোনো না কোনো সময় ঘুরবেই। আর এই পরিবর্তনশীল জীবন মেনে নিয়ে কেউ সামনে এগিয়ে যায়, কেউ পিছিয়ে পড়ে। সতীশ কৌল সেই ওঠা-পড়া-কেই জীবন দিয়ে বুঝেছিলেন। এমনিতে শিল্পীর জীবন বড় অস্থির হয়। সবসময় যে খ্যাতির শিখরে চড়ে থাকা যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। কেউ কেউ খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ভাবেও সচ্ছল হয়ে ওঠেন। তাতে ভবিষ্যৎ যেমনই হোক, অর্থকষ্ট হয় না। কারও ক্ষেত্রে সেই অবকাশ থাকে না। জীবনের স্রোতে নিজেকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সবটুকু উজাড় করে দেন তাঁরা। তাতে সমস্যা একটাই, নৌকার গতি কমলে, হাল ধরার মতো শক্তি থাকে না। সতীশের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল।
আশির দশকে লাগাতার সিনেমা আর সিরিয়ালে অভিনয় করে বিপুল খ্যাতি পেয়েছিলেন সতীশ। পাঞ্জাবি সিনেমায়ে তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ২০১১ সালে পিটিসি তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। কিন্তু জীবনের শেষ কটা দিন প্রায় ভিক্ষা করেই দিন চলত তাঁর। নেপথ্যে ২০১৫ সালের এক দুর্ঘটনা। এর ফলে কৌলের শরীর অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিল। টানা দুবছর বিছানায় কাটাতে হয়। কাজ ছাড়া এতটা সময়, ডেকে এনেছিল অন্য সমস্যা। গুরুতর আর্থিক ক্ষতি হয় সতীশের। এরপর সেই অন্ধকার সময়! ২০২০ সাল, সারা দেশজুড়ে লকডাউন। ভয়ঙ্কর আর্থিক টানাপড়েন মধ্যে কোনওক্রমে জীবন কাটিয়েছিলেন অভিনেতা। আর্থিক দূরাবস্থার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর লুধিয়ানা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মতো আরও অনেকেরই জীবন কেড়ে নিয়েছে কোভিড। তবে সতীশকে নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়! তাঁর কারণ সতীশের তুখড় অভিনয়। এতবড় অভিনেতা হয়েও শেষ জীবনের করুণ পরিণতি হাসিমুখে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সতীশ।