পাকিস্তানের রণতরীর নামকরণে সাধারণ ভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের ছাপ বেশ স্পষ্ট। যেমন, PNS বাবর, জাহাঙ্গির, শাহ্জাহান ইত্যাদি। বর্তমানে যা পাকিস্তান, তা এক কালে মুঘল সাম্রাজ্যেরই অংশ ছিল। ফলত এই নামকরণের অর্থ বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে, ইতিহাসবিদদের অবাক করেছে টিপু সুলতানের প্রসঙ্গ।
টিপু সুলতান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অকুতোভয় রাজা। ইতিহাস এভাবেই তাঁকে মনে রেখেছে। সেই টিপু সুলতানের নামে আছে পাকিস্তানের এক যুদ্ধজাহাজ। কিন্তু কেন টিপুর নাম জড়িয়ে গেল পাক নৌসেনার সঙ্গে? এ প্রশ্ন আজও ভাবিয়ে তোলে ইতিহাসবিদিদের।
ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিরধের প্রতীক টিপু। ‘টিপুর বাঘ’ এই স্মারকটিই যেন সেই ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে চলেছে। টিপুকে যখন ব্রিটিশরা পরাজিত করল, তখন তাঁর চিহ্ন মুছে দিতেই এই বাঘ সরিয়ে দিয়ে আনা হয় সিংহ প্রতীক। যে সিংহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতাপ গেঁথে দিয়েছিল ভারতবর্ষের বুকে। তা সত্ত্বেও অবশ্য টিপুর লিগ্যাসি মুছে ফেলা যায়নি। স্বাধীন ভারতেও টিপু বীরের সম্মান-সম্ভ্রম নিয়েই থেকে গিয়েছেন দেশবাসীর মনে। কিন্তু সেই টিপু পাকিস্তানে কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন? সে-দেশের এক রণতরীর নাম কেন টিপু সুলতানের নামে রাখা হয়েছে, তা রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ইতিহাসবিদ বিক্রম সম্পথের মতে, শুধু নামকরণের খাতিরে যে টিপুকে টেনে আনা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এর নেপথ্যে আছে ঐতিহাসিক সূত্র। এবং তা ব্রিটিশ আমলের ভারতের দিকে তাকিয়েই খুঁজতে হবে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের কথা, সে সময় একটি অপারেশনের নামের সঙ্গে জুড়ে ছিল ‘সোমনাথ’-এর অনুষঙ্গ। কেন সোমনাথ? ইতিহাস ঘাঁটলে এর সূত্রটি খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। সোমনাথ মন্দির এবং গজনির ইতিহাস উসকে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। প্রসঙ্গত, সেই সময় সোমনাথ মন্দিরের নতুন নির্মাণকাজ চলছিল। সব মিলিয়েই ছিল এই কৌশলী নামকরণ।
আরও শুনুন: শরিয়া আইনে কেন নেই আস্থা? ৩৬ বছর পর ফের বিয়ে করে জানালেন মুসলিম দম্পতি
ইতিহাসবিদ বলছেন, পাকিস্তানের রণতরীর নামকরণে সাধারণ ভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের ছাপ বেশ স্পষ্ট। যেমন, PNS বাবর, জাহাঙ্গির, শাহ্জাহান ইত্যাদি। বর্তমানে যা পাকিস্তান, তা এক কালে মুঘল সাম্রাজ্যেরই অংশ ছিল। ফলত এই নামকরণের অর্থ বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে, তাঁকে অবাক করেছে টিপু সুলতানের প্রসঙ্গ। এর ঐতিহাসিক কারণ হিসাবে তিনি টিপুর লিগ্যাসিকেই চিহ্নিত করেছেন। টিপুর প্রতিরোধ এবং বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর যে তেজোদীপ্ত রুখে দাঁড়ানো, তা আজও স্মরণীয়। ভিনদেশের আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বা প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাটিই এই নামকরণের ভিতর নিহিত। ১৯৯৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত পাক নৌবাহিনীর সম্ভারে আছে এই রণতরী। আর তার সঙ্গেই সীমান্ত পেরিয়ে জেগে আছে টিপু সুলতানের বীরত্বের স্মৃতি।