কপালে সিঁদুর, হাতে চুড়ি, পরনে সিঁদুর…ছবিমুক্তির আগেই ‘পুষ্পা’র এই লুক সামনে আসে। নতুন অবতারে আল্লুকে দেখে অবাক হয়েছিলেন সকলেই। প্রশ্ন ছিল, কোন প্রয়োজনে এমন সাজে সাজলেন তিনি? সিনেমায় সেই উত্তর মিলল। তবে সিনেমা সাফল্যের নেপথ্যেও কি এই লুক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে গড়ে নিতে হয় অভিনেতাকে। সেই প্রভাব পড়ে সিনেমার ব্যবসায়। সাম্প্রতিক কিছু সিনেমায় নায়কের বিশেষ অবতারে প্রকাশ, আলাদা মাত্রা জুড়েছে সিনেমার সাফল্যে। আল্লু অর্জুনের পুষ্পার কথাই ধরা যাক! ছবিতে যে বিশেষ অবতারে ধরা দিয়েছেন দক্ষিণী তারকা, তা নজর কেড়েছে সবার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই লুক কেন আর কীভাবে সিনেমার সাফল্যে গতি আনতে পারে?
‘বাহুবলি’, ‘কান্তারা’ থেকে শুরু করে হালের ‘আরআরআর’, দক্ষিণি ছবির বলিউড রাজ নতুন নয়। তালিকায় নয়া সংযোজন ‘পুষ্পা-দ্য রুল’! সিনেমার আদ্যপান্ত সেই ‘রাজ’ কাহিনি বোনা হয়েছে। তাতে জুড়েছে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু। ‘পুষ্পা’ সিক্যুয়েলের প্রথম ভাগ নিয়েও বেশ চর্চা হয়েছিল। ব্যবসাও মন্দ করেনি সেই সিনেমা। তবে দ্বিতীয়ভাগ নিয়ে আলোচনার একাধিক কারন রয়েছে। প্রথমেই বলতে হয় সিনেমায় নায়কের বিশেষ লুক-এর কথা। প্রথম ভাগের তুলনায় এখানে পুষ্পা অনেক পরিণত। চেহারায় ‘বড়লোকি’ ছাপ স্পষ্ট। বড় বাড়ি, বড় গাড়ি, সবমিলিয়ে ব্র্যান্ড পুষ্পা! যে এতটুকু অপমান সে সহ্য করতে পারে না। শুধু নিজের অপমান নয়, স্ত্রী-বন্ধুবান্ধব, কারও অপমান সহ্য করে না পুষ্পা। জবাবের ধরন অবশ্যই উগ্র। ইটের জবাবে পাথর নয়, বোমা ছুড়তে অভ্যস্ত পুষ্পা। অথচ তার চোখেও জল আসে। পুরনো কথা মনে করে, মাঝরাতে ডুকরে ওঠে সেই ভীষণ পুরুষ। চমকে ওঠে দর্শক, প্রশ্ন জাগে, এ কেমন পুষ্পা! তবে সিনেমায় এমন চমক একবার নয়, বেশ কয়েকবার ধরা পড়বে। পুষ্পার নয়া অবতারে সামনে আসাও ভাবতে বাধ্য করবে অনেককে।
যে পোষ্টার ঘিরে রীতিমতো হইচই পড়েছিল, সেই লুকে আল্লুকে দেখতে পাওয়া যাবে সিনেমার দ্বিতীয়ভাগে। শাড়ি, সিঁদুরে বিশেষভাবে সেজে তাণ্ডব নাচবেন পুষ্পা। গানের তাল মিলিয়ে যে দৃশ্য দেখানো হবে, তা খুব একটা অচেনা ঠেকবে না দক্ষিণের দর্শকদের। এমনটাই তো হয়ে থাকে ‘গঙ্গমা যাত্রা’ উৎসবে। পুরুষরা শাড়ি পরে মহিলা সাজেন, এই ভাবেই তাণ্ডব নৃত্য করেন। তাঁদের ঘিরে থাকে হাজার হাজার ভক্ত। সিনেমায় এই উৎসব এতটাই নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে, যে দর্শকদের মনে হতে বাধ্য, এমনটা অভিনয় হতেই পারে না। ঠিক যেমনটা দেখানো হয়েছিল কান্তারা-য়। দক্ষিণের এই ছবিতেও ‘ভুতা কোলা’ নামে এক বিশেষ ধর্মীয় সংস্কৃতিকে দেখানো হয়েছিল। গোটা সিনেমা জুড়ে আরতি, ভোগ বিতরণ, যজ্ঞ সহ একাধিক হিন্দু রীতি দেখানো হয়েছে। কোথাও এতটুকু খামতি রাখা হয়নি, পাছে কেউ ভাবাবেগে আঘাতের মতো অভিযোগ করে বসেন। পুষ্পাতেও স্রেফ ওই নাচ নয়, দেখানো হয়েছে বিভিন্ন পুজোর অংশ। কপালে ত্রিপুন্ডক এঁকে কোটি টাকার ব্যবসা করতে যাচ্ছেন সিনেমার নায়ক। যেখানে সামান্য টাকার গরম দেখাতে ভগবানকেও অপমান করে বসছেন কেউ কেউ। সেখানে টাকার গদি থেকে নেমে শিবের মাথায় জল ঢালছেন পুষ্পা! এইসব দেখে দর্শকরা হাততালি দেবেন, এতে অবাক হওয়ার কি আছে!
সিনেবিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়টাকেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন। একদিকে যেমন আদিপুরুষের মতো সিনেমা হিন্দু ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে বিতর্কে জড়াল, অন্যদিকে তেমনই আরআরআর রাম-হনুমানের গল্প বুনে অস্কার সফর করে ফেলল! তার থেকেই সহজ সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে, দেশের ভিতর যে হিন্দু ভাবাবেগ, তা পুষ্পার সাফল্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। স্রেফ ধর্ম নয়, হারিয়ে যেতে লোক সংস্কৃতিকেও সামনে এনেছে পুষ্পা। তাতেই হলমুখী হয়েছেন দর্শকরা। সিনেমার গল্প যেমনই হোক, যে উপাদান পুষ্পায় মিশিয়েছেন পরিচালক, তা উপেক্ষা করার সাহস বা ইচ্ছা কোনওটাই হয়নি ভারতীয় দর্শকদের। তাই বাহুবলির প্রথমদিকে যখন কাঁধে শিবলিঙ্গ তুলে নিলেন প্রভাস, কিংবা শেষ দৃশ্যে তীর-ধনুক হাতে দেখা গেল আরআরআর সিনেমার নায়ক লক্ষ্মণকে, কিংবা কান্তারার ক্ল্যাইমাক্স দৃশ্যে বীভৎস নাচ, আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে অনেককে। পুষ্পাও সেই তালিকায় সদর্পে নিজের নাম জুড়েছে। সিনেমায় মহাকালী রূপে পুষ্পার তাণ্ডব নৃত্য সেসব হাততাই কুড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি, আরও অনেককে হলমুখী হতে বাধ্য করেছে