ভয়ঙ্কর, কিন্তু সুন্দর। একবার সামনে থেকে দেখলে, ভোলার উপায় নেই। কিন্তু জীবন হাতে নিয়ে ফেরা হবে কি না, তা বলা কঠিন। তবু সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের ঝোঁক বাড়ছে। দেশ বিদেশের মানুষ ছুটে আসছেন, সামনে থেকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘লক্ষটা তুবড়ি এক সঙ্গে জ্বলচে, লক্ষটা রঙমশালে যেন এক সঙ্গে আগুন দিয়েছে…’
এই বর্ণনা অচেনা নয়। কীসের বর্ণনা তাও অজানা নয়। সামনে থেকে আগ্নেয়গিরি দেখে শঙ্করের অভিজ্ঞতা এভাবেই লিখেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই চাঁদের পাহাড়ের ‘অগ্নিদেবের শয্যা’ পর্ব যতই ভয়ঙ্কর হোক, তা সামনে থেকে দেখার ইচ্ছা হয় বহু পাঠকদের। কিন্তু স্রেফ তাঁরা নন, সামনে থেকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যান আরও অনেকেই।
পর্যটনের নয়া ট্রেন্ড ‘ডার্ক ট্যুরিজম’। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ, ধ্বংসের চেহারা সামনে থেকে দেখার টানে ছুটছেন অনেকেই। তাতে যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত দেশ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সদ্য জ্বলে যাওয়া ট্রেনের কামরা, তাতে প্রাণ নেই, রয়েছে হাহাকার। তবু সেই চিৎকারে আনন্দ খুঁজে পান অনেকেই। ছুটে যান সেই ছবি দেখতে, সামনে দাঁড়িয়ে সেই ছবি তুলতে। তাতে পর্যটকদের বিপদের সম্ভাবনা নেই, তাই আলোচনা হলেও এই প্রবণতায় নিয়ন্ত্রণে নিদান দেননি কেউ। সমস্যার শুরু এখানেই, ডার্ক ট্যুরিজমের বিস্তার কখন যে পর্যটকের সুরক্ষাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, তা বোঝা যায়নি একেবারে। আর তাতেই জীবন্ত আগ্নেয়গিরি দেখার মতো ভয়ঙ্কর কাজ, হয়ে উঠছে নতুন ডেস্টিনেশন!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি সামনে থেকে দেখতে চাইছেন অনেকেই। তার নির্দিষ্ট পথ রয়েছে, পদ্ধতি রয়েছে, সেসব ভয়ঙ্কর কম নয়, তবু সব সয়ে ভয়ঙ্করের অভিজ্ঞতাই ঝুলিতে ভরতে চাইছেন অনেকে। কোন আগ্নেয়গিরি কখন জেগে উঠবে সেই হদিশ আগে থেকে পাওয়া কঠিন। তবু মোটের উপর একটা ধারণা করতে পারেন বিশেষজ্ঞরা। সেইমতো চিহ্নিত করা হয় আগ্নেয়গিরি। কোনওটা পাকাপাকি ভাবে ঘুমন্ত, কোনওটা জীবন্ত, আবার কোনওটা হঠাৎ জেগে উঠতে পারে এমন। প্রথম ধরনের আগ্নেয়গিরি পর্যটকদের আকর্ষণ হতেই পারে। দ্বিতীয় আর তৃতীয় ধরনের আগ্নেয়গিরি পর্যটকদের টানলে বেজায় মুশকিল! চোখের অভিজ্ঞতা যেমনই হোক, মনের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের হবে না। প্রাণভয়ে ছুটতে হতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। যেমনটা হয়েছিল ইতালির পমপেই শহরে! সেই ধ্বংসের নিদর্শণ আজও দেখা যায়। সেসব দেখতেও হাজির হন কেউ কেউ। তাতেও জীবন্ত আগ্নেয়গিরি সামনে থেকে দেখতে আপত্তি বা ভয় নেই। মার্কিন মুলুক, জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একাধিক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে, সেখানেই ভিড় জমান পর্যটকরা। অবশ্য সবক্ষেত্রে একে ডার্ক ট্যুরিজম বলা যায় না। কারণ এইসব অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়ম মেনে নিজেদের মতো করে অদ্ভুত সহাবস্থান গড়ে তুলেছেন। সেইসব মেনে যদি ঘুরে আসা যায় আগ্নেয়গিরির সামনে থেকে, তাতে সমস্যা নেই কিছুই। কিন্তু নিয়মের বিরুদ্ধে হেঁটে ভয়ঙ্করকে আহ্বান জানানো মোটেও স্বাভাবিক নয়।