ক্যামেরা এবং ছবির গল্পে একটি আপ্তবাক্য হিসেবে জুড়ে গেছে ‘চিজ’। আর বলা মাত্রই মুখ ভরে ওঠে ঝলমলে হাসি! কিন্তু তার পিছনে কি আছে অন্য কোনও কারণ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘একটু হাসো তো ,খোকা’ – এমন অনুরোধের মুখে সোনার কেল্লা-র মুকুল সপাটে জানিয়ে দিয়েছিল যে, ‘আমার হাসি পাচ্ছে না’। কিন্তু সবাই তো আর মুকুল নয়! ফলে, ক্যামেরা চালু হলেই মুখে হাসি। যেন কেউ শিখিয়ে দিয়েছে, এটাই দস্তুর। ‘স্মাইল প্লিজ!’ – ক্যামেরা তাক করে এমনটাই বলে ওঠেন চিত্রগ্রাহক। উলটোদিকে একা কিংবা সবাই তখন একগাল হাসি নিয়ে তৈরি। এমনকী রামগরুড়ের ছানাদেরও যেন এই সময়ে হাসতে মানা নেই। কেন এমনটা করেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে অনেকে বললেন, দেখতে ভালো লাগে তাই। কিন্তু ইতিহাসও কি সেই কথা বলছে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
বিবর্তনের প্রথম লগ্নে মানুষ নিজের স্মৃতি স্থায়ী করতে গুহার গায়ে আঁকত ছবি। সেই অভ্যাস আজও যায়নি, জীবনের ছোটখাটো ঘটনা চিরকাল স্থায়ী করে রাখেন প্রায় সকলেই। তবে এখন আর গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকার প্রয়োজন পড়ে না। তার জন্য ক্যামেরা রয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্যামেরা বলতে আলাদা একটা যন্ত্রকেই কেবল বোঝাত। বর্তমানে সেই যন্ত্রের কাজ করে দিচ্ছে মোবাইল। যদিও ক্যামেরার গুরুত্ব এখনও রয়েছে। মোবাইলে যে ছবি ওঠে তার চেয়ে ঢের গুণ ভালো ছবি তোলা যায় ক্যামেরায়। আর সেখানেই উল্লেখ মেলে বিশেষ কিছু শব্দের।
‘say cheese!’- এর কথাই ধরা যাক। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এই শব্দ কানে আসা মাত্র, মাখোমাখো হাসিতে ভরে ওঠে সকলের মুখ। তবে ফটোগ্রাফির ইতিহাসের গোড়ার দিকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে এমন হেসে ওঠার কোনও রীতিনীতি ছিল না। ১৯ শতকের শুরুতে ক্যামেরার সঙ্গে আমজনতার আলাপ। তখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতেও ছিল না হাসিখুশিমাখা চেহারার ধারণা। সেকালের ক্যামেরাই ছিল একখানা বেঢপ বাক্স আকৃতির বস্তু। তারপর ধীরে ধীরে বদলাতে থাকল ক্যামেরার রকমসকম। পাশাপাশি পালটে গেল ছবি তোলার ধরনও। বিশ শতকে ক্যামেরার প্রযুক্তিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। ক্যামেরার এক্সপোজারকে বাড়িয়ে তুলে চটজলদি ছবি তোলার মোক্ষম উপায় খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই ক্যামেরায় আসে কিছু বদল। ছবি তোলার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মুহূর্তগুলিকে বন্দি করাও হয়ে ওঠে সহজ।
আরও শুনুন: দেখলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে হয়! ক্যামেরা ক্লিক করলেই কোথায় কোথায় বরাদ্দ শাস্তি?
আর এরই সঙ্গে জুড়ে যায় আরও একটা বিষয়। তা হল উত্তর ঔপনিবেশিক রুচি। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মিডিয়া প্রভাব ফেলেছে দৈনন্দিন জীবনযাপনে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয়েছে সাংস্কৃতিক মনোভাবের। বিপণনে এসে হাজির হয়েহে বলিউড কিংবা হলিউড তারকার প্রভাব। প্রায় এই সময়েই ক্যামেরা এবং ছবির গল্পে একটি আপ্তবাক্য হিসেবে জুড়ে যায় ‘চিজ’। তার যুতসই কারণও আছে। ‘চিজ’ বললেই দুই ঠোঁটের মধ্যে যে ফাঁকটুকু তৈরি হয়, তাতেই দিব্য হাসির আদল আসে মুখে। হাসতে চায় না যে, তার মুখ থেকেও হাসি বের করিয়ে আনতে পারে এই কথাখানা। আর তাই ক্যামেরা এবং ‘চিজ’ শব্দের এই যুগলবন্দি যে ছবি তোলার ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন, তা স্বীকার করতেই হয়। তবে ‘চিজ’ না বলে উঠলে যে ছবি ভালো উঠবে না, তা কিন্তু মোটেও নয়।
চিজ বলুন বা নাই বলুন, ঝলমল করে হেসে উঠলে আপনার ছবিটি ক্যামেরার লেন্সে যে চমৎকার করেই ধরা থাকবে তা নিশ্চিত।