তাঁদের দেখার জন্য হাজার কৌতূহলী চোখের ভিড়। অথচ তাঁরাই মিশে রয়েছেন ভিড়ের মধ্যে। নিতান্ত সাধারণের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁদের অ-সাধারণত্ব। আসুন, আজ শুনে নিই সেইসব ‘তারা’দের কথা।
নিজের স্টার তকমা ভুলে, একেবারে আমআদমির মতো লাইনে অপেক্ষা করছেন তিনি। তিনি নয়নতারা। খ্যাতির শিখরে উঠলেও যে মাটির সঙ্গে মিশে থাকা যায়, রাহুল দ্রাবিড়ের পর এবার তা আরও একবার প্রমাণ করলেন দক্ষিণের অভিনেত্রী নয়নতারা।
নয়নতারাকে কে না চেনে! দক্ষিণী সিনেমার দাপুটে অভিনেত্রী নয়নতারার অভিনয় বারবার দর্শকদের মন কেড়েছে। তামিল, তেলুগু এবং মালয়ালম- তিনটি ভাষার সিনেমাতেই শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা আছে তাঁর। এখানেই শেষ নয়। স্বীকৃতির ঝুলিতে ফিল্মফেয়ার তো আছেই। সন্দেহ নেই তিনি ‘স্টার’। কিন্তু নক্ষত্র তো বহুদূরের। পর্দার গ্ল্যামারের আড়ালে যে একজন মাটির মানুষ থেকে যায়, তার কথা ক’জনই বা মনে রাখেন! মনে করালেন সেই ‘স্টার’ নয়নতারা।
সম্প্রতি অভিনেত্রী জন্মদিনে গিয়েছিলেন দিল্লির এক রেস্তরাঁয়, সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ভিগনেশ শিবান। তিনিও একজন প্রখ্যাত পরিচালক। এদিকে রেস্তরাঁয় পৌঁছে ঘটল বিভ্রাট। যখন তাঁরা পৌঁছলেন, তখন সবকটি টেবিলেই কেউ না কেউ খাচ্ছেন। চাইলে নিজের পরিচিতি খাটিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। অন্যান্যদের মতোই অপেক্ষা করলেন প্রায় প্রায় আধ ঘণ্টা। দু’জনই সেলেব, শেষে কিনা তাঁরা অপেক্ষা করছেন আমজনতার লাইনে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। রেস্তরাঁর মালিক কিংবা অন্যান্য কেউই আসলে তাঁদের চিনেতে পারেননি। অতএব লাইনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অন্যান্যদের মতোই একটি টেবিলে বসার সুযোগ পান তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে অপরিচিত হয়ে থাকার সেই অবিশ্বাস্য মুহূর্ত তখন নিজেরাই ক্যামেরাবন্দি করেন তাঁদের ফোনে। শুধু তাই নয়, সেটিকে আবার পোস্টও করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্যাপশনে জানিয়েছেন, অচেনা হয়ে থাকার মুহূর্তটি তাঁদের কাছে বেশ স্পেশাল।
আরও শুনুন: সেলেবদের হাতে Lucky Charm, সত্যিই কি বদলে দিয়েছিল ভাগ্য?
নয়নতারার এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় রাহুল দ্রাবিড়ের কথাও। শুধু ভারত কেন, সারা পৃথিবী তাঁকে চেনে। মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সায়েন্স ক্যাম্পে। একেবারে মাটির মানুষ!নক্ষত্রসুলভ ছিঁটেফোটা ব্যবহারও ছিল না। ক্রিকেটদুনিয়া অবশ্য এই দ্রাবিড়কে চেনে। সাফল্যের শিখরে থেকেও তিনি নিরংহকারী, ক্রিকেটের পূজারী মাত্র। মাঠের বাইরের দ্রাবিড় যে আলাদা নন, সেদিন সকলেই তা বুঝেছিলেন। চাইলেন তিনি সামনের সারিতে গিয়ে বসতে পারতেন। কিংবা তাঁকে ঘিরে হইহই রইরই পড়ে যেতে পারত। কিন্তু তিনি দ্রাবিড়! চিরকাল একটু আড়ালে থাকা মানুষ! তাঁর যাবতীয় ঐশ্বর্য ব্যাট হাতে, বাইশ গজে। তার বাইরে তিনি যে স্পেশাল নন, বিশেষ করে সেই কথাটিই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
অথচ সামান্যতম খ্যাতিও কতজনের মাথা ঘুরিয়ে দেয়। কর্মক্ষেত্রের ইমেজ এসে ঢেকে দেয় আসল মানুষটিকে। তখন অনেকেই নিজেকে কেউকেটা ভাবতে শুরু করেন। আর সেই সেলেব-সেলেব ব্যবহারে ঢাকা পড়ে যায় তাঁর বা তাঁদের আসল পরিচয়। কেউ কেউ আবার পরিচিতির সূত্রে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতেও কসুর করেন না। কোথাও আবার সেলেব মানে যেন তার সাত খুন মাফ! ভারতবর্ষের মতো ‘স্টার’পুজোর দেশে এই সব দৃশ্য আমাদের অচেনা নয়। যাঁরা খ্যাতিমান, তাঁরা খ্যাতির আলোয়ান বেশ ভালোভাবেই নিজের চারপাশে জড়িয়ে রাখেন। ক’জন আর দ্রাবিড় কিংবা নয়নতারা হয়ে উঠতে পারেন!
এঁরা তাই আক্ষরিক অর্থেই ব্যতিক্রম। কেননা এঁরা নক্ষত্রের সঙ্গে মানুষকে এক আসনে বসাননি। পর্দার নক্ষত্র পর্দাতেই মানানসই। সে সব ছাপিয়ে মাটির ধুলোয় মানুষের ভিড়ে সাধারণ হয়য়েও যে থাকা যায়, তা একরকমের জীবনশিক্ষাই বটে।
সাধারণ মানুষের কাছে সেলেব্রিটির নাগাল পাওয়া বরাবরই কঠিন। অথচ তাঁরা নিজেরাই যখন তাঁদের সে পরিচয় ভুলতে চান তা দেখে মুগ্ধ হতেই হয়। ‘বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে’- সেই শিশুপাঠ্য কবিতার পঙক্তিই নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন দুই ‘বড়’মানুষ।