গান গাওয়া চলবে না মেয়েদের। এমনই ছিল কাবুলের রীতিনীতি। আর সেদিকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লড়াইয়ের ময়দান নীলা
এ এক হার না মানা মেয়ের গপ্পো। সমাজ, পরিবেশ তাকে যতই থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, সে মেয়ের বুকের ভিতর ছিল আগুন। আর আগুনকে কি রুখে দেওয়া যায়? যায় না যে, আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার জিতে সে কথাই বুঝিয়ে দিল আফগানভূমের এক কিশোরী।
নাম তাঁর নীলা ইব্রাহিমি। বয়স সতেরোর কোঠায়। আর এই বয়সেই সে জিতে এনেছে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার। কেন জানেন?
মাত্র তেরো বছর বয়সেই এই মেয়েটি লড়াই শুরু করেছিল তার দেশের মেয়েদের জন্য। তালিবান ২০২১ সালে যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তার আগে থেকেই কাবুলে মেয়েদের গান গাওয়া ছিল বারণ। বারণ ছিল জোরে কথা বলা, যাতে কণ্ঠস্বর শুনতে না পায় কেউ। আর ঠিক এই কারণেই সে নিজের কণ্ঠকেই হাতিয়ার করে সেই ফতোয়ার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল নীলা ইব্রাহিমি।
তালিবানের দখলে আফগানভূমে মেয়েদের হাল বরাবরই শোচনীয় হয়েছে। হিজাব-বোরখায় সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখতে হবে, স্কুল-কলেজ-অফিসে যাওয়া চলবে না, তাদের গলার স্বর শোনা যাবে না- এমনই ফতোয়ার পর ফতোয়া নেমে এসেছে মেয়েদের উপর। স্কুলে পড়তে চেয়ে তালিবানের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল মালালা ইউসুফজাই-এর, সে কথা তো আমরা সকলেই জানি। তালিবান যখন কাবুল দখল করে, তখন উত্তাল পরিস্থিতির কারণে নীলা ও তার পরিবার, আরও অনেকের সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে চলে যায়। তারপরে, আবারও পাকিস্তান ছেড়ে ঠাঁইনাড়া হওয়া। এবার নীলা পাড়ি দেয় কানাডার উদ্দেশে। তবে এই বাসাবদলের মধ্যেও একটুও ঘাটতি পড়েনি নীলার অদম্য জেদে। তার চোখে কেবল ছিল একটিই স্বপ্ন। আফগানিস্তানের অন্ধকারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে থাকা মেয়েদের মধ্যে আশার আলো ফিরিয়ে দেওয়া। তাই লড়াই থেমে থাকেনি। কানাডায় বসেই সে আফগান নারীদের জন্য চালু করে ‘হার স্টোরি’ নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটির উদ্দেশ্য ছিল আফগানি মেয়েদের লড়াইয়ের গল্পগুলো একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া।
আরও শুনুন: ঢাকায় রাজু ভাস্কর্যে নারীর মাথায় হিজাব! বোরখা খুলে ‘স্বাধীন’ ঘোরার আয়োজন দিল্লিতে
জানা যায়, তালিবান ক্ষমতায় আসার আগেই ‘আই অ্যাম মাই সং’ শিরোনামের একটি প্রচারমূলক অভিযানের দ্বারাই সোশাল মিডিয়ার নজরে আসে নীলা। সেই প্রচারের মূল লক্ষ্যই ছিল কাবুলের পড়ুয়াদের জনসম্মুখে গান গাওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই। সেই অভিযানের জেরেই স্কুলছাত্রীদের গান গাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় কাবুল সরকার। আর এবার নীলার মুকুটে যুক্ত হল নয়া পালক। মাত্র সতেরো বছরে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারের শিরোপা উঠল তার মাথায়। তাঁর এই সাফল্য আফগানভূমে সমস্ত অবদমনের মধ্যে ডুবে থাকা মেয়েদের হয়তো একটুখানি আশার আলো দেখাবে তার এই অর্জন।